Tuesday, June 18, 2019

Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-3 End



অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)

(৩)

ইতিহাসের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে সবাইকেই হয়, নাহলে মানুষ চলবে কি ভাবে। তবে নিকৃষ্ট স্মৃতি বড়ই নিষ্ঠুর, পিছুটান ছারতেই চায়না। প্রথম ঘোষাল এখনও বাজারে। বাজারের থলেটা এখনও তার বগল চাপা। পকেটে যে টাকা নিয়ে
Adekha Upakhyan-bangla Story
বেড়িয়েছেন তাঁর হিসেবে, এ বাজারের দাম অনুপাতে, তিনদিনের বাজার হয়ে যাবে। তাই এমন দিনে মাছ নিয়ে অর্থব্যায় করাটা তাঁর মানায় না। অনেক পুরনো চাবি দেওয়া হাতঘড়িটা দেখে বুঝতে পারেন বেশ দেরি হয়ে গেছে আজ। রাস্তায় বেড় হয়ে তাঁর কি যে হল, পুরনো স্মৃতি বারবার রাস্তা রুখে দাঁড়াচ্ছে। বাজার করার ইচ্ছেটাই বরং তাঁর নষ্ট হয়ে গেছে। এই দূর্লঘ্ন স্মৃতিগুলোকে ডুবোতে চাইলেও বারবার ভেসে ওঠে অকৃতঘ্নের মত, যেন অবিনশ্বর এরা। এসব স্মৃতি আজকাল এ বৃদ্ধের চক্ষুশূল। কিন্তু এড়িয়ে যেতে চাইলেও যেন পারেন না এড়াতে। তখনই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিকে। বারবার দীর্ঘশ্বাস বেড় হয়ে আসে অযাচিত শব্দে। 

ঘড়িটার দিকে তাকাতেই মনে হয় বাজার করার কথা। পছন্দ অপছন্দের কোন বালাই নেই, এবার আর কোন পরিচিতের দোকান নয়। নতুনদের সাথে নতুনভাবে দর কষাকষি করে ব্যাগটার অংশবিশেষ ভর্তি করে ফেললেন শেষমেশ। পকেট ফেরত টাকাটা রেখে ব্যাগটা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে চলে এলেন সেই বিভীষিকাময় খাদ্যরাজ্য থেকে। এতটুকু বাজার আজ বড় ভারী বোধ হয় তাঁর। তবুও তো দু-তিন দিনে সবটা শেষ করে ফেলবে বাড়ির বড় বড় মুখগুলো। একাএক দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে তাঁর। মাথার উপর তিন তিনটে বিয়ের দায়িত্ব বহন করা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার যখন চাকরিও শেষ হয়ে যায়, বোধহয় নিজেকে সাবলীল করে রাখাটা কঠিন হয়ে পরে। কালোই জগতের আলো – একসময় আদর করে বলা হত তাঁর তিন মেয়েকে। আজ মনেহয় যেন অভিশাপ। বারবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ‘ভগবান কেনই বা বড়লোকদের ঘরেই আলোকোজ্জল জ্যোতিষ্কের জন্ম দেন আর গরীবের ঘরে কালো! গরীবের জ্বালাকে কি আরো একটু উষ্কিয়ে দেবার জন্য!’

‘চাকরি চলে গেছে, ছেলে নিঃশেষ হল, টাকা পয়সার অভাবে মেয়েদের বিয়ের কথা চলছে না, রাতের ঘুম উড়ে গেছে বহুদিন যাবৎ - আর কি কি ছিনিয়ে নিতে চায় সেই ঈশ্বর নামের প্রস্তর!’ হাজার হাজার ঝটিকা বয়ে হাটতে থাকলেন প্রথম ঘোষাল। সত্যিই প্রকৃতি বড় বিরূপ তাঁর প্রতি। যাকে তিনি ভরসা করতে চেয়েছেন তারাই তাকে ঠকিয়েছে... সেই ভাইদের থেকে ছেলে পর্যন্ত, সব। ভগবান কি সত্যিই এত নিষ্ঠুর!

বাড়ির দরজায় এসে কড়াঘাত করতেই দরজা খুলে দিল ছোট মেয়ে। বাবার হাত থেকে ব্যাগটি নিয়েই জড়িয়ে ধরল তাঁকে। এই তাঁর ছোট মেয়েটি বড়ই আদুরে। তাকে কাছে পেলেই সব রাগ, সব দীর্ঘশ্বাস মুহুর্তেই উড়ে যায়। বলতে ঘরটাকে অদ্ভুত জাদুমন্ত্রবলে জীবিত করে রাখে সে, সবসময়। ছোট বাড়ির দরজা খুললেই এঘর সেঘর। রান্নাঘরটি পর্দার আড়ালে একদম শেষে। ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে একবার ভাল করে দেখলেন তিনি। এ তো সেই, তাদেরই তো একজন, যাদের নিয়ে তাঁর বর্তমান, তাঁর ভবিষ্যত। সারা রাস্তায় কি সব কল্পনা করছিলেন তিনি, অবাস্তবিক। ছোট মেয়েটির হাসিতেই তো সুখের সারা সম্পদ লুকায়িত। এই তিন মেয়ে তো তাঁর মায়েরই প্রতিরূপ। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন তাঁর আদরের মেয়েকে। এই মেয়েই প্রথম বাবুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে।
‘...এত বাজার কে আনল!!!’
আশ্চর্য, হতবাক বাবার গম্ভীর প্রশ্ন নিনাদ হয়ে বেজে উঠল বাড়ির ভিতর। বড় মেয়ে, মেজ, সবাই দৌড়ে এল। এত বাজার যে কে আনল, তার উত্তর দিল না কেউই। যা বলল তা শুনে প্রথম ঘোষালের চক্ষুস্থির। হাসির ছন্দেই তাঁর সেই ছোট্ট মেয়ে তাকে জড়িয়ে বলল “বাবা, আজ দুটো চিঠি এসেছে... একটা বড়দির এপয়ন্টমেন্ট আর...”
আর শোনার আগেই প্রথম বাবুর চোখে জল এসে গেল। তিনি কি বলবে বুঝতে পারলেন না। শুধু অবাক নয়নে চাইলেন বড়’র দিকে। বাকিটা সেই বলল বাবার পা ছুয়ে “আরেকটা খবর... মেজো’ কে যারা দেখে গেছিল, তারা বিয়েতে রাজি।” রীতিমত চমকে ওঠে তাঁর সর্বাংগ। ‘এত কিছু একসাথে... এও কি সম্ভব!’ চোখের জল আর বাঁধ মানে কোথায়। একাএক প্রসারিত দুবাহুতে সব্বাইকে এক্কেবারে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অজানিতেই হাত জোর হয় অদৃষ্টের উদ্দেশ্যে।

অদৃষ্ট, এই অদেখা যদি সবাইকে এভাবেই শান্তির সমাপ্তি দিতেন কতই না সুখি হত এ পৃথিবী। শতাধিক কষ্টের পর এইটুকু শান্তি সবারই তো প্রাপ্য। কিন্তু সবাই কি পায়! সবাই কি চমকে ওঠে ঠিক প্রথম ঘোষালের মত, ঠিক যেমন করে চমকে দিয়েছে তাঁর জাজ্জল্যমান মেয়েটি। একদম অদেখা স্বপ্নের মত, অদৃষ্টের কৃপায়।।


***সমাপ্ত***

Sunday, June 16, 2019

Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-2


অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)

(২)

আকাশ ছুতে কে না চায়। কেউ চায় তা ঘুমের ঘোরে, কেউ বা চায় লাল বেলুন হয়ে নীল আকাশ ঘুরে বেড়াতে। কত স্বপ্ন দেখতে পারে মানুষ তার হিসেব নেই। কত স্বপ্ন যে ভেঙে যায় চোখের সামনে তারও হিসেব নেই। হিসেব নেই স্বপ্নপূরণেরও। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণ গড়ে হয়ত একজনের হয় কখনও। প্রথম ঘোষালের জীবন প্রাঙ্গণের দ্বিতীয় জন্মের প্রথম অধ্যায়ে যখন পুত্রসন্তান জন্মায়, অন্ধকার লোকারণ্যে যেন আলো দেখতে পেলেন বাড়ির সবাই। ব্যাগের পর ব্যাগ বাজার আসত তখন তাদের তিন ভাইয়ের যৌথ পরিবারে। আনন্দ উল্লাসের প্রাচিরহীন বারান্দায় আকাশ কুসুম স্বপ্নে সাজানো হয় সেই শিশুকে। আনন্দের প্রকাশকে রূপ দেবার জন্য নামও দেওয়া হয় – আলোক। তারপর সেই আলোক বড় হতে হতে আরও তিন উজ্বল কণিকা জ্বলে ওঠে ঘরে। কোন আক্ষেপ করেনি কেউ এই তিন মেয়ের জন্ম নিয়ে। মনকে আশ্বাস
Adekha Upakhyan-Story
দিয়েছিল এই বলে যে আলোকই বড় হয়ে তাদের জীবনে আলো জ্বেলে দেবে। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বোনদের বিয়ে দেবে, স্বপ্নমণ্ডিত আকাশে বিচরণ করাবে তাদের। এই সুবর্ণ স্বপ্নকে দুরের আকাশে দেখতে পেয়ে প্রথম ঘোষাল তাঁর ছেলেকে স্বস্নেহে, স্বযত্নে পড়াশুনার হাতে-খড়ি দিলেন। তবে অজানিতে কেবা হাসে তাঁর এসব কান্ড দেখে, যেন ঠিক তারপরেই অথৈ জলে পরে গেল তাঁর পরিবার। পরিবার বিভাজন নিজেদের মধ্যে এক ক্লেশময় সম্পর্কের সৃষ্টি করল। তৈরি হল এক অকল্পনীয় পরিস্থিতির। ভাগ্য তাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বেড় করে দিল তাঁর পৈত্রিক বাড়ি থেকে, ভিটাচ্যুত হলেন স্বপরিবার। তাঁর ভাইদের ব্যাবহার আর সেই আইনের নাছোড়বান্দা প্যাঁচগুলো বুঝতে না পেরে সর্বস্বান্ত হল প্রথম ঘোষাল। বাড়ি থেকে চিরবিদায় নিতে বাধ্য হল শেষমেশ এবং সেখান থেকেই শুরু হল তাঁর আত্মান্বেষণের কাহিনী। তাঁকে পারতেই হবে, এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এই নতুন পরিস্থিতিতে একমাত্র সম্বল তাঁর চাকরিটি আর আশার ফসল তাঁর ছেলে। যেভাবেই হোক আলোককে মানুষের মত মানুষ তৈরি করতেই হবে তাঁর। সব সম্পর্কের মুখে ছাই চাপা দিয়ে এগিয়ে গেল নতুন উদ্যমে নিজ পারিবারকে টিকিয়ে রাখার তাগিদে। পরিবারকে নিয়ে গড়ে তুললেন নতুন বাসস্থান। ছেলের পড়ার খরচ যোগালেন নির্দিধায়, ধার দেনার সাগরে নামিয়ে দিলেন নিজের সংসারকে। হয়ত ভগবান তাঁর পানে মুখ তুলে চেয়েছিলেন, তাঁর পরিশ্রমের সাথী হয়েছিলেন যাতে তিনিই জয়ী হোন। শারীরিক, মানসিক ভাবে খেটে তাঁরও প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে, তারুণ্যের ছল-ছল চোখে আলোক যখন এগিয়ে দেয় তার মাধ্যমিকের ফার্স্ট ডিভিশন আর চারটি লেটারের মার্কশিট আর স্কুল প্রদত্ত প্রশংসা পত্র। তাঁরও নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে, অন্তর গর্ব করে ওঠে, বুঝতে পারেন একাংশও হারেনি তাঁর চেষ্টা। অশ্রু বাঁধ ভেঙ্গেছিল তাঁরও, গোটা পরিবারই আনন্দের অশ্রুতে ভেসেছিল সেদিন। তারপরও এমন দিন আরও এসেছিল, প্রথম ঘোষালের বুকের উচ্চতা তখন কে দেখে। তবে, ছেলের টিউশিনির জোগান দিতে গিয়ে বাড়ির এককোনে মেয়েদের পড়াশুনা তেমন ভাবে আর চলে না, তারা অবহেলিত হয়ে পরে। পড়াশুনায় জোর না পরায় তারা তাদের দাদার মত ফার্স্টের পর্যায় আসতে পারে না। এটা তাদের দোষ নয়, ওরা যে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এটাই তাদের সিমিত আয়ের পরিবারের জন্য অনেক। এর চেয়ে আর কিই বা দিতে পারে এই পরিবারকে আপাতত। দাদা একটা চাকরি পেলেই তো স্বপ্ন রঙ্গীন হয়ে যাবে মুহুর্তে। বাবার তো এখনও উপার্জন চলছে, দাদার একটা কিছু হলেই একেবারে সোনায় সোহাগা হয়ে যাবে তাদের পরিবার। তাই তো আনন্দের স্বপ্নে মসগুল সকলে।

সত্যিই, সময়ের সাথে সাথে সে এক দারুন ছেলে হয়ে উঠেছে, যেমন চেহারা তেমনি স্বভাব-চরিত্র, আর তেমনি শিক্ষা। একে একে পরীক্ষার সব গণ্ডিই অবলীলায় উতরে গেল আলোক। প্রতিবারই পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই সে আপ্লুত করতে সক্ষম হয়েছে, তার একান্ত সাধনার ফসল ফলিয়ে। তার হাতের ফাইলটি এখন সম্পদে ভরপুর, বহু কষ্ট করে পাওয়া এসব তার যখের ধন। এক একটি সার্টিফিকেট দেখবার মতন। এখন এসবের মুল্যায়নের পালা। সব্বাই তার পানে চেয়ে, এবার হয়ত তাদের অপেক্ষা শেষ হবে, এবার হয়ত ভাগ্য মুখ তুলে চাইবে।

ফাইল নিয়ে আলোক বেড়িয়ে পরল বিশ্বজয় করতে, ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠল যে একটা ভাল চাকরি চাই। কিন্তু বাজার যে এত ব্যাস্ত, এত জনবহুল, তার জানা ছিল না। ফর্ম ভরতে ভরতেই কলমের কালি তার শেষ হয়ে এল। এমপ্লয়মেন্ট নিউজের দাম বাড়তে বাড়তে আন-এমপ্লইদের মাথার আরও এক যন্ত্রণা হয়ে দারালো। যেন কাগজের বাড়তি মূল্য ব্যালেন্সের জন্য একমাত্র বেকাররাই টার্গেট। সাথের অনেকেই চাকরি পেল, কেউ পৈত্রিক ব্যাবসায় আর কেউবা গেল বিদেশে। অনেক কিছুই বদলে গেল, কিন্তু আলোকের চাকরি হল না।

Adekha Upakhyan-Story
এদিকে, প্রথম বাবুর চাকরির মেয়াদ এই ফুরোলো বলে। এতোগুলো এতকষ্টে উপার্জিত সার্টিফিকেটের কোন মূল্যই পাওয়া যাচ্ছেনা এই ব্যাস্ত জনবহুল মহাসমুদ্রে। রাস্তায় নামলেই যেন কত সহস্র আলোককে দেখতে পাওয়া যায়, তার হিসেব রয়েছে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের জমাবদ্ধ খাতার কালো অক্ষরে। আর সেই সংখ্যা দিন কে দিন শুধুই বাড়ছে। ন-টার রাস্তা তো জনবহুল, ঘুরে ফিরে একি প্রশ্ন বারবার মনে আসে – ‘কত মানুষ তো চাকরি পায়, তারা কি সবাই তাদের ক্লাশের খাতায় একশ শতাংশ নম্বর পেয়েছে! আচ্ছা, সবারই কি সব কাজের এক্সপেরিয়েন্স আছে! তবে তারা ইন্টারভিউতে গেলেই সিলেক্ট হয়ে যায় কিভাবে!’ জানতে খুবই আগ্রহী আলোক। রাস্তার ট্রাফিক পয়েন্টের তলায় দাঁড়ালেই আশে পাশে কত অফিস ঘিরে ফেলে তাকে। প্রাত্যহিক কত লোক চাকরি করে এসব অফিসে, কলকারখানায়। সবাই পায় আর শুধু তার বেলাতেই নেই।  সংবাদপত্র ওলটালে তো মনে হয় যেন চাকরি হরিলুটের বাতাসা, কিন্তু বাতাসার বুকে যে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের নাম বসানো, তার খবর আগে জান্ত না সে। আলোক এ পৃথিবীর জটিলতায়, সংসারের প্রতি দায়িত্ববোধের আচমকা আবির্ভাবে দিশেহারা হয়ে পরে। বাড়িতে প্রায়ই পাওনাদারদের ভীর, তাদের চোখ রাংগানি মনোভাব, মস্তিষ্কে এক চরম বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাকে রুক্ষ করে তোলে। মাঝরাত পর্যন্ত মা’য়ের সাথে তার বাবা’র নিচুগলার আলোচনা, তাকে আরও সন্ত্রস্ত করে তোলে। সে ভয় পায় অদূর ভবিষ্যতের পরিণামকে কল্পনা করে। তার বোনেদের চোখে আশাভঙ্গের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পায় সে। ভয়ে থরথর কেঁপে ওঠে বাবার ক্লান্ত মুখখানা দেখলে। ক’দিন বাদে রিটায়ার করবেন তিনি, তারপর! এক বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়ায় সে। ঘরের বাইরের জগতটা যে এতটা প্রফেশনাল, এতটাই প্র্যাক্টিকেল, এতটাই যে স্কুলের বই’য়ের চিন্তাধারার উলটো, তা সে আন্দাজ করতে পারেনি। জীবনের এতটা পর্যন্ত বই’য়ের জগতটাকেই সমরূপ দুনিয়ার নিয়ম ভেবে তাতেই মন্ত্রমুদ্ধের মত এতটাই আবদ্ধ হয়েছিল যে, আজ এ দুনিয়ার নিয়ম কানুন তার কাছে যেন অচেনা ঠেকছে। বার বার তার মনে হচ্ছে যেন সে পিছিয়ে পরছে জীবনের দৌড়ে। ‘নিজেকে অপদার্থ বলে মনে হচ্ছে...’ বাড়ির ভিতরে ঢুকলেই নিচু হয়ে যায় তার মাথা। এতগুলো সার্টিফিকেট, বাক্সবন্দী করে রেখেছে – ‘এর চেয়ে দুর্ভাগ্য কি আর হতে পারে...’ বাড়িতে দু-মুঠো খেতে পর্যন্ত তার বুকে বাঁধে, বাবা-মা’য়ের চোখে চোখ রাখতে হীনবোধ হয়। মনে হয় সে যেন এই পৃথিবীর জঞ্জাল মাত্র। হন্যে হয়ে ঘুরেও একটা চাকরির জোগার করতে পারলনা সে। ‘অত্যন্ত হীনশ্রেণীর কাপুরুষ যে নিজের পরিবার থেকে কেবল নিতেই শিখেছে, দিতে পারেনি এক কনাও কোন সুখ...’

Adekha Upakhyan-Story
রাস্তায় নামলে, আলোক আর আজকাল চোখে দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। কোথায় যাবে, কি করবে, কার পদতল লেহন করলে একটা চাকরি পাওয়া যাবে, তার সংসারটাকে শেষমেশ রক্ষা করতে পারবে। কি করে বাবা-মা-বোনেদের মুখে যতসামান্য হলেও হাসি ফোটাতে পারবে। ভাবতে ভাবতে সমস্ত শরীরটা তার থরথর করে কেঁপে কেঁপে ওঠে। হাতের ফাইলটা বুকে চেপে ধরে হাউ-হাউ করে কেঁদে ওঠে সে... সমস্ত পৃথিবীটার একেবারে বিপরীতে যেন দাঁড়িয়ে আছে সে, একদম একা। তাকে মনে হচ্ছে, সাহায্য করতে কেউই এগিয়ে আসছেনা, আসবেও না। কানে বেজে ওঠে, যেন কেউ বলছে... এ পৃথিবীতে দুর্বলদের কোনও স্থান নেই, দুর্বলেরা মিশে যাবে রাস্তার ধুলোয়। আলোক যেন নিজেকে সেই দুর্বলই ধরে নিয়েছে। তার মগজ আর তার অধীনে নেই। জিগীষাবৃত্তি তার লোপ পাচ্ছে দিন পর দিন। সংসার-মানুষ-জন, সব থেকে পালাতে পারলে সে বাঁচে। এই জগতের ভয়াবহ চক্রভুজে ফেঁসে হাজারের মত, হাজার এক ভুক্তভোগী হয়ে গেল সে। তারপর দিশেহারা পথিকের মতই তার আপন-পরের সব আশা আকাঙ্ক্ষার আহুতি দিয়ে নিজের বাঁচবার পথ বেঁচে নিল। তার আশায় যারা বসে থাকত, যে পরিবার তাকে নিয়ে সোনার স্বপ্ন দেখেছিল, রেখে গেল তাদের জন্য নিজের নিষ্প্রাণ ঝুলন্ত দেহ। ...এই শেষ, সমাপ্তি হয় আলোক অধ্যায়ের, আর তার সাথেই আছড়ে পরে অনেক অনেক স্বপ্ন। পৃথিবীর বুকে ছেড়া কাপড়ের মত লুটিয়ে পরে আশার সিংহাসনচ্যুত তার সেই পরিবারটি, আলোকের পরিবারটি। এমন ভূমিস্খলনে নড়ে উঠল ঘরের প্রাচির, তার ভেতরের প্রাণীরা, উন্মাদ হয়ে গেল সেই আশার স্রষ্টা- আলোকের মা।


চলবে...

Friday, June 14, 2019

Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-1



অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)

(১)

পাশের জমজমাট চরাদামের শব্জীবাজারটা ছেড়ে রাস্তার ওই মোড়ে বসা সস্তা বাজারের দিকে হন্‌ হন্‌ করে এগিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। পায়ে হাঁটা পথে বাজারটা একটু দুরে হলেও, তার মত অনেক মানুষেরই ভীর হয় সেখানে। সস্তা, বাড়ি গিয়ে পস্তা – এই নিয়ম জীবনভর এদিক ওদিক না তাকিয়ে পালন করা যায় না। অন্তত তার জন্য, যার ঘাট শুন্য মাঠ। অন্তত তারা, যারা হঠাৎ চুনপুটি হয়ে হাজার দায় দায়িত্বের চাপে পরে এক্কেবারে কপর্দকশুন্য। বাধ্য হয়েই সস্তার দিক খুঁজে ফেরে তাদের চোখ। ভদ্রলোকের বর্তমান অবস্থায়ও সেই একই কারুণ্যের প্রকোপ ঘটেছে। তাই তিনিও গত দুবছর যাবত সস্তার পথ ধরতে বাধ্য হয়েছেন। অটো রিক্সার ধার ধারেন না। বাড়ি দুর হলেও, সরকারি ভাঙাচোরা ফুটপাত দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতেই তিনি অভ্যস্ত। তাছাড়া বাজার হাটের শহুরে রাস্তাঘাট তো তেমন কি আর সুরক্ষিত যে যানজটের ধাক্কায় হাত-পা না ভাঙ্গাটা অস্বাভাবিক। তার চেয়ে তাঁর চোখে পায়ে হাঁটা ফুটপাতই অনেক শ্রেয়। চশমাটা নাকের ডগায় ঠিকমত টেকাতে পারলেই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।

Adekha Upakhyan-Storyভদ্রলোকের নাম প্রথম ঘোষাল। তিনি বাড়ির মেজছেলে হয়েও কেন যে তাঁর নাম ‘প্রথম’ হল – তা বহুচেষ্টা করেও জানা যায়নি। কিন্তু তাঁর মত একজন সাংসারিক দায়বদ্ধশীল মানুষের চিরাচরিত পরিচয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হবে এই গল্পের স্রোতে। তবে এ গল্পের সূচনা এই মুহূর্তে তাঁর হাত ধরেই করা যায়। বর্তমানে প্রথমবাবু হাতে একটি কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে, এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চলেছেন বাজারের মাঝে। সাদা – যা সাত্বিকতার পরিচয় বহন করে, তার খুবই প্রিয় রং। তাই সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে প্রায়ই রাস্তায় বেড় হন তিনি। তিনি বলেন, এতে নাকি মন-মগজ দুটোই খুব ভাল থাকে – সাইকোলজিক্যাল এফেক্ট আর কি। যাহোক, ফেলে আসা বাজারটার শব্জী সুদর্শনীয় হলেও এগিয়ে গিয়ে দামটা জানতে বড়ই অস্বস্থি লাগে, জানেন যে কুলোবে না তার মাসিক হিসেবে। কিন্তু হায়... মনে পরে এককালের সেই ব্যাগ ভর্তি করে বাজার করার দৃশ্যটা... সবই তো সেই, সেই দোকান, সেই দোকানদার, তার চেলারা, একই তাদের হাঁকডাক। তখন বাজার করতে যাবার সময় সবাই ডাকত, জানে... কথা কম কাজ বেশি করার মানুষ ইনি, আর কোনোটা কিলো’র কমও নেবেন না। হেসে খেলে সব ব্যাবসায়ীরা তার সাথে ব্যাবসা করত। সবই ঠিক সেই আছে, যা পাল্টে গেছে তা হল সময়। আজ তারা কেউ কাউকেই চেনে না, অপরিচিত অকাল কুষ্মান্ডে পরিণত হয়ে গিয়েছেন ক্ষনেকের তফাতে তিনি।

কথায় বলে... মাছ বাঙ্গালীর প্রিয় প্রথম চাহিদা, আর এই ভদ্রলোকও তার ব্যাতিক্রম নয়। বাজারে এসে যদি মাছবাজারটা অন্তত একবার দর্শন করতে না পারেন, তাঁর নিজেকে অপূর্ণ বলেই মনে হয়। মনে হয় যেন তাঁর বাঙ্গালী হয়ে জন্মানই বৃথা। এই মাছবাজারে, ঐ মাথায় মদনের দোকানে প্রায়ই বড় রুই ওঠে। আর বলতে কি, সেদিন মাছবাজারটা মনেহয় পুরোপুরি ওখানেই। ভীর ঠেলে গোটা শরীরটা না ঢুকলেও, চশমাটা নাকের উপর শক্ত করে ধরে গলাটা ঢুকিয়ে দিলেই দেখা যায় – বেশ তাজা মাছ এসেছে আজ। তাইতো ক্রেতাদের ভীর উপচে পরেছে মদনেরই দোকানে। তার আরও দু-দুটো হেল্পার আছে – একজন কাস্টমার হাঁকে, মাছ দেখায়, ওজন করে আর একজন কেটে দেয় ঝটপট। মদন শুধু ক্যাশ সামলায়। ও জানে, ব্যাবসায়ীদের সেটাই আসল, হিসেবটা নয় থেকে ছয় হলেই ব্যাবসা লাটে উঠে যাবে। তাই টাকার ব্যাপারটা সে নিজেই সামলায়, বেশ পুরনো খেলোয়াড় বলতে গেলে। প্রায় ছোটর থেকে তাকে দেখেছেন প্রথম ঘোষাল। প্রথম দিকে তার বাবার সাথে বসত, সোজাসুজি কথা বলত আর হিসেবের ব্যাপারে এক্কেবারে একশ শতাংশ ভেজিটেরিয়ান। বাবা মারা যাবার পর, ব্যাবসাটা ওই তো সামলে নেয়, নইলে অনেকেই এদিক ওদিক থেকে এসে যেভাবে জেঁকে বসেছিল তার ব্যাবসাটা গোটানোর জন্য! কতই বা বয়েস হবে তখন তার, এই পনেরো কি ষোল। ...সেই এত ঘটনার সাক্ষী এই ভদ্রলোক, তার পরিচিত। কিন্তু স্বভাব মতই, কাজের সময় কাজী আর কাজ ফুঁড়লে পাজি। একটাও টাইম পাস আলাপি কথা না বলাটা মদনের বিশেষ স্বভাব। ক্রেতাদের তো অনেকেরই অনেক চাহিদা। কেউ বলছে দেড় কিলো মাছটার মুড়োটা বাদ দিয়ে বেশ ভালো কটা পিস করতে হবে বড় বড়, কেউ আবার কানকো'টা উঠিয়ে দেখে প্রসন্ন মনে বলে ওঠে ‘হু, বেশ তাজা... দেখত কত হবে!’ কেউ জানতে চায় মুড়োর দাম, কেউ গুনছে লেজা’র পিস। বেশ ভালই লাগে প্রথম বাবুর। বেশ অনেকদিন আগে বাড়িতে তাঁর গৃহিণীর রান্না করা রুইমাছের মুড়িঘণ্টো’র গন্ধ জেগে ওঠে নাকের শীরায়, স্বাদের আহ্লাদ ফুটে ওঠে তাঁর জীভে। আহা, ‘অনেকদিন হয়ে গেছে বাড়িতে ভালো মাছ হয়নি... নিয়ে গেলে কেমন হয়!’ সেই ভীরের মধ্যে দাড়িয়েই কল্পনায় বিভোর হলেন যে মাছ নিয়ে গেলেই কি কি করবেন তাঁর গিন্নী। মেয়েদের সাথে কি আনন্দ করেই না খেতে বসবেন সবাই। সুগন্ধি মাছের ঝোল বেড়ে দেওয়া হবে তাঁর সামনে, অমৃতের আমেজে ভরা সেই ঝোল পাতে ঢালবার জন্য তুলে ধরবেন তিনি...
“ও মশাই, মাছ নেবেন তো নিন না, ভীর বাড়াচ্ছেন কেন অযথা অমন দাড়িয়ে থেকে!”
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দিয়ে দাড়িয়ে থেকে স্বপ্নের সুবর্ণ সিঁড়ি ভেঙ্গে যাওয়া দেখতেই কড়ায় গণ্ডায়ের হিসেব বুঝে ফেললেন তিনি।
‘ধ্যুৎ!! এক গ্রাসও মুখে দিতে দিল না বেটারা... বড়ই অসভ্য জীব এই মানুষ। স্বপ্ন বড় প্রাইভেট বস্তু, তা সত্ত্বেও তাতে তার ল্যাং না কাটলে চলে না!’ ভীরের ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেয়ে একটু অস্বস্থি অবশ্যই অনুভব করেছিলেন ভদ্রলোক। মনে পরে তাঁর আশেপাশের সেলফিস জগতটার কথা আর সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারের কথাও। দিন দিন যে কি পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেই পরিবার, ভেবেই আৎকে ওঠে ভেতর। তিন তিনটে জ্বল জ্যান্ত মেয়ে যেখানে উপযুক্ত অথচ কোন ব্যাবস্থাই হচ্ছে না কারো, যাঁর কাঁধের উপর তাঁর সংসারের একমাত্র পুরো দায়িত্ব, অথচ উপার্জন নেই, আর্থিক সম্বল বলতে কিছু ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার ইন্টারেস্ট মাত্র, তাঁর এত আয়েসি স্বপ্ন দেখা মানায় না। ...মনে পরতেই পাঞ্জাবীর পকেট থেকে হাতখানা বেড়িয়ে আসে একাএক। চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। মদন তাকে চেনে, তাঁর রোজকার অভ্যেস হয়ত জানে, তাই অমন গোবেচারা মুখ দেখে মিচকি মিচকি হাসে।
“কি দেব আপনাকে... মাছের মাথা?”
‘না থাক, আজ নয়...’
অজান্তেই উত্তর বেড়িয়ে যায় তাঁর মুখ থেকে, বলতে গেলে স্তিমিত কয়েকটা শব্দ আর কি। কতটা কে শুনতে পেল কে জানে। কিন্তু এরপরেই যেন মনে হল, মাছবাজারের সারাটা ভীর তাকে ঠেলতে ঠেলতে একদম বাইরে ছুরে ফেলে দিল। যেন ভদ্রলোক এ পৃথিবীর কোনও অংশই নন। একেবারে অবাস্তবিক কোনও পরিতক্ত মাত্র।

Adekha Upakhyan bengali Story

বাজারভর্তি মানুষ, সবাই কেনাকাটা করতেই চরম ব্যাস্ত। কেউ কোথাউ পাঁচ মিনিটের বেশি দাড়াচ্ছে না। বেশির ভাগেরই ব্যাস্ততার কারন তাদের চাকরির ঘণ্টা। কিন্তু প্রথম বাবুর জন্য তো সেই ঘণ্টা অনেকদিন আগেই বাজা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁর বয়স হয়েছে, তাঁর চাকরীর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু তাঁর প্রয়োজন মেটেনি। এই ভবসাগরে এই বয়সেও তাঁর অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তাঁর তিন মেয়ে আছে, তাকে তাদের বিয়ে দিতে হবে – তাঁর জন্য এ সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। ছেলেটার মত মেয়েরাও পড়াশুনায় ভাল হলে, চাকরী-বাকরি কিছু একটা করতে পারত। ‘কালো, কুৎসিত, রূপ নেই-গুণ নেই, কতগুলো অপদার্থ এসে জুটেছে এ কপালে...’ আক্রোশে ভরে ওঠে প্রথম বাবুর মন। মেয়েদের ওপর ভরসা করে কোনও লাভ নেই, যেখানে তাঁর গুণী ছেলেটির এমন হাল হল সেই হিসেবে নির্গুণীদের তো কোনও স্থানই হয়না। মেয়েরা তাই প্রথম ঘোষালের কাছে খরচের খাতার হিসেব মাত্র। ...মাছবাজারের দুয়ারে হীন বলে মনে হয় নিজেকে। তাঁর ভদ্রতার সাদা পোশাকে হাত-পা বাঁধা এই মানুষটি নির্বোধের মত হাতের ব্যাগটি বগল চাপা দিয়ে এদিক ওদিক দেখে আরেক জন-অরন্যের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর বাড়ির অবস্থাও অনেকটা আজকাল এরকমই – জনবহুল অথচ আয়হীনা হয়ে পরে রয়েছে পৃথিবীর মুখের ছিবড়ার মত। মাত্র দুবছর আগেও তাদের পরিবার চলার মত চলে যেত। ছেলেটিও ছিল, আশার কিরণও ছিল কিছু। এখন তো সেও নেই, আর তাঁর সেই তথাকথিত অন্ধের জষ্ঠি চাকরীটিও নেই। যা থেকে গেছে তা হল... এক মানসিক ভারস্ম্যহীনা স্ত্রী, তিনটি বিবাহযোগ্যা মেয়ে আর একহাড়ি পূর্ণ দুর্ভাগ্য।

চলবে...

Monday, June 10, 2019

JangalMahal - জঙ্গলমহল - poem

জঙ্গলমহল
JangalMahal - জঙ্গলমহল Poem
JangalMahal - জঙ্গলমহল Poem

অস্তায়মান সূর্যের লাল আভা...
পশ্চিমাকাশের আলোরিত আলোকচ্ছটা,
স্পষ্টতই, এবার দিন ডোবার পালা।
নজর চাই, শুধু নজর! অন্যথা সব বৃথা,
নির্ভরযোগ্য দৃষ্টির ঐশ্বরিক আশিস যদি নেই...
সব একেবারেই বৃথা।
পাল্টে সবই হয়ে যেতে পারে,
আকাশ ছুতে না পারার ব্যাথা।

এবার দিন ডোবার পালা,
ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা, ঘনিয়ে আসবে...
রাত্রি, তারপর, রাতের বেড়াজালে আবদ্ধ,
শেষ না হওয়া... রাত।
জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের, ঘুম নেই চোখে...
শান্তি নেই বুকে,
কে কখন কাকে করবে গ্রাস।
নিশির ডাকের, অসংখ্য অকাল্পনিক তরাস,
উন্মাদ করা অট্টহাস-রুরহাসির পরিহাস...
পরিত্রাণ চাহি হে স্বর্গদূত, স্বর্গ তব স্থাপন কর এ দেশে।
পশুত্ব অর্জন করতে পারিনি আজও,
আজও হয়ে আছি মানুষ এ মনের কোনে।

নিভৃতে আবৃত ত্রাসের মায়ায়,
জেগে ওঠে পৈচাশিক ক্ষুধা,
সুযোগ পেলেই উতরোতে চায়,
করে দানব, মানবের উপহাস।
দিন দিন বাড়েই শুধু... কেন পরিত্রাণাভাব!
কেন, অমৃতভান্ডকে দেই দূরে ছুরে,
অশান্তিকে তো পূজা করিনা...!
তবুও কেন বদ্ধমূল হয়, সেই কুটিল অন্ধকারে।

হে নাথ, তুমি কাকে দেবে দোষ,
উত্তর যে নেই, এ শুধু তোমারই সর্বরোষ।
তোমার রচিত সৃষ্টি, স্রষ্টাকেই করে হানা,
তুমি রূখতে পার, তবুও পারনা,
অদৃষ্ট কারনে দাও সেই সৃষ্টির জরিমানা।

তবুও প্রার্থনা হে তব চরণে,
...মন-মস্তিষ্ক ভাল নয় আজি,
ভেতরে ফোটে হাজার বাজি,
কোন তটেতে রব পরে, বিনিদ্র অন্ধকারে,
শান্তি দাও হে...
ওগো ত্রিকালদর্শী।।

Thursday, June 6, 2019

Prarthana - প্রার্থনা - Prayer poem for Sri Sri Thakur Anukul


প্রার্থনা
Prayer poem for Sri Sri Thakur Anukul
Prayer poem for Sri Sri Anukul.jpg
Prayer poem for Sri Sri Thakur Anukul
হে পরম দয়াল...
স্নেহময় তুমি পিতা,
তুমিই যে আমার মহাভারত,
পুরাণ তথা গীতা।
তোমার দেওয়া মন্ত্র যেন,
শান্তি আনে মনে,
বিপদে-আপদে, ভালোয়-মন্দয়,
স্বস্তি থাকে প্রানে।

মানুষ যখন নিঃস্ব, তার যখন
সব খোয়া যায়,
দিশাহারা হয়, মন হয় চঞ্চল,
বিকৃত হাতের স্পষ্ট ছাপ,
করে তাকে স্থবির, অচল...
সহায় মাত্র তুমিই,
হে দয়াল আমার...
তাকে যেন রক্ষা কর,
উদ্ধার কর সেই অসময় হতে,
সাহসের পরিত্রাণ দিও গো তাকে,
তোমার করুণাসম শান্তিময় পথে।

এতটুকুই নিবেদন, প্রার্থনা আমার...
ছেড়ে কভু যেওনা মোদের,
আশিস দাও যেন অর্জন করি,
যোগ্য আসন শিষ্যত্বের।।

Saturday, June 1, 2019

Priyo Oteet - প্রিয় অতীত - Poem


..প্রিয় অতীত..

Priyo Oteet-Poem
Priyo Oteet-Poem

হে আমার প্রিয় অতীত..
তোমাকে যদি পাইতাম আবার,
কোমল  হৃদয়ে বাধিয়া রাখিতাম,
বানাইয়া মনের মিত্৷


না কোনই বাঁধা, কোন না আপত্তি,
যেন আনন্দের ভেলায় ভাসিয়া চলি,
পাই হাজারো নতুন উৎপত্তি৷
সুবিশাল ধরা'টি যেন পরিচয়হীন,
অজানা কত কথা, সবেতেই শুধু অবাক,
উজার করি নিজ'ভাবে, সকল সম্পত্তি৷

গুটাইয়া নিই সব, নিজ মনিকোঠায়,
কবে কি লাগিবে কাজে, কেবা জানে,
বাক্সবন্দী করিয়া রাখি,
একাধিক গৃহসাজে৷

খেলার দৌড়ে হাঁফাইয়া উঠি,
বন্ধুদলের সাথে,
একটু জিরাইয়া আকাশছোঁয়া,
স্বপ্নীল গাছের ছাঁ'তে৷

প্রিয় অতীতের হাসির গল্প,
বুঝিনি কভু কিছু...
অন্যের সুখেতে আপ্লুত সুখ,
হেসেছি পিছু পিছু৷

আজও তাহাদের খুঁজিয়া চলেছি,
অতীত মনোরম,
আজও মনে হয় জীবনে অতীত,
রইল বড়ই কম৷
তাই তো বলি,  মনের মাঝে যাওনা আমায় নিয়ে,
স্বপ্নগুলি আবার দেখি, ছোট্ট দুচোখ দিয়ে৷৷