Friday, November 1, 2019

অন্তরালে - Bangla Kobita

Bangla Kobita


কেমন আছ? অনেক বিরল অনুভূতির একাংশের
একভাগ এই শব্দ,
কেমন আছ বললে নাতো!
পুরোনো প্রেমিকের আঙ্গিক,
অসাবলিলতার লয়,
বল কেমন আছ!
জটিল হৃদয়পুঞ্জে ব্যার্থ মানুষের ভালোবাসা,
সুরের তকমা লাগিয়েও,
ছন্দহীন বোধ হয়,
ভাষার আবেদন যেন বার বার ফিরে আসে,
জানতে চায়,
কেমন আছ তুমি!
আমার আন্দোলিত ভালোবাসা!

বিনিদ্র রজনী,
জাগি আমি-তুমি নির্দিধায়,
হারানো সুর বিভোর বহুদূর,
স্নিগ্ধ শোভন অছিলায়।
আমি ভাল নেই, স্মৃতির পাতায়,
তুমি যে বদ্ধমূল, এখনও,
আমি জানি না আমাদের সোপান কোথায়।
শুধু ভেবে পাই,
ভালো আছ তুমি,
ভালোবাসা আজও যেন,
কোথাও লুকিয়ে রয়েছে অবহেলায়।।

Wednesday, October 30, 2019

মহিয়সী - Bangla Kobita


bangla kobita
মহিয়সী Bangla Kobita

ইতিহাস হয়ে যাবার মতন মেয়ে আমি নই,
মেয়েলিপনার বাঁকা হাসিতে চিন্ময় করে রাখি,
আমি এ ধরা,
আঁকা বাঁকা রাস্তা নিষিদ্ধ বললেও,
আমি মৃত্তিকা ঊর্বরা,
আমি সমবলে একতালেই হাঁটি,
যত্তদূর যাবার ইচ্ছে যাই,
পেছন পানে টান পরলেই,
সবল মনে ফিরে তাকাই।

ইতিহাস হয়ে যাবার মতন মেয়ে আমি নই,
বাস-রেলে তাই একা চরে বেড়াই,
নিজ অধিকারে,
নতুন যুগে তাল মিলিয়ে চলা আমি শিখেছি,
হাজার ঝাপটা সামলেও,
একাধিক অভিযোগে বেসামাল হলেও,
আজ রজনীও হয় নিথর,
আমার প্রস্তর বহুরূপ দেখলে।

ইতিহাস হয়ে যাবার মতন মেয়ে আমি নই,
আমি এগিয়ে যাওয়ার মেয়ে,
আমি এগিয়ে যাওয়া জাতির প্রতিভার সকাল,
আমি পিছপরুয়াদের সাথে চিরকাল,
আন্দোলিত করার মেয়ে।

ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত পালটে নিয়েছি আমি,
আমার শরীরে,
ভেতরের সৌন্দর্যে তাই আমি প্রস্ফুটিত,
বাইরের আবরনটি খোলস মাত্র,
নিরাবরন পরিচয়পত্র।

ইতিহাস হয়ে যাবার মতন মেয়ে আমি নই,
আমি এ যুগের মেয়ে,
সন্মান যাচাই করে নেবার ক্ষমতা,
আমার আছে,
আছে..
জীবন বাচাই করে নেবার ৷৷

Thursday, October 3, 2019

Bangla Kobita - শুন্য থেকে শুরু

Bangla Kobita, Recitation in bengali
Bangla Kobita - শুন্য থেকে শুরু

কিরে... ভয় করছে?
এত বিশালাকার পৃথিবীর সুবিস্তৃত চরাভূমি দেখে,
তোর কি ভয় করছে!
সেই তো সেদিন, আমিও তো ছোট্টটি ছিলাম,
মায়ের কোল ভিন্ন, অন্য কোলোও যে থাকবে,
ভাবিই নি কখনও।
তাওতো অকপটে বিশ্বাস করি সেই পরিবর্তন,
মা বললো, এ তোমার বাবা... আমি মানলাম,
মা বললো, এ তোমার এ, এ তোমার সে... আমি জানলাম।
আমার শুন্য স্থান পূর্ণ করে দেয়,
অগনিত সম্পর্কের বাঁধন,
জনবহুল পৃথিবী বুকে টেনে নেয়,
আমাকেও ভালবাসতে শেখায়, ভালো লাগতে শেখায়, 
ইন্দ্রিয়গুলোকে রূপ দিতে শেখায়।
আমি চলি, কেবল চলি, শুধুই চলতে থাকি,
আকাশ ছোঁব বলে,
আমি চলি, সমাজ গড়ব বলে,
আমি চলি, সবাইকে নিয়ে রাজত্ব করব বলে।

কিরে...এখনও ভয় করছে?
নিজের থেকেও বড্ড বেশি বড় বলে মনে হয়,
এই দুনিয়াটা, না রে!
রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে,
বড় অচেনা মনে হয়, অন্তহীন এই জনসমুদ্র!
হারিয়ে যাবার ভয় হয়,
বারবার মনে হয়, 
চেনা মানুষটি যদি থাকতো আমার পাশে, সারাটা জীবন!
যান্ত্রিক জীবন কিছুটা হত হয়ত সরল!
ভরসা করে চোখের জল লুকোতাম তার কোলে,
একটি গন্ধের আবেগ এনে দিত মমতার আশ্রয়,
কি রে, চোখ বুজে এখনও খুঁজিস সেই শুন্যকে!
যে তোকে প্রথমবার সামাজিক হতে শিখিয়েছিল,
ভালো হত না রে,
মা... যদি আপনি এগিয়ে এসে বলতো,
এ তোমার এ, এ তোমার সে...
ভীর আর ভয় করছে না, তাই তো,
আবার চোখ বোজ, এবার দেখতে পাবি,
রাস্তা কেমন সোজা হয়ে গেছে,
মানুষ গুলো আর অচেনা নয়,
মায়ের আদলেই পূর্ণতা পেয়েছে, যেন সবাই,
সবাই যেন ভালোবাসতে শিখছে দিনে দিনে।।



YOUR SEARCH TAGS:
satyapriyo, bangla kabita, bangla kobita, bangla kobita abritti, bangla kavita abritti, abritti, recitation, bengali, bengali poem, kobita

Monday, September 30, 2019

স্বপ্ন ভালবাসি - Bangla Kobita (2019)

Bangla kobita
স্বপ্ন ভালবাসি - Bangla Kobita

আত্মাকে  আত্মসাৎ করে,
বাস্তবতার সাথে আত্মীয়তা করা,
বড়ই কঠিন...
আমার সামনে,
সব রাস্তাই গোধূলির ধূলিমাখা,
আবঝা মলিন...

স্বপ্ন বড়ই দূর্লভ, সবার জোটেনা,
ভাগ্য চাই.. সুখোস্বপ্ন দেখার,
তাকে জীবিত করার,
তাকে.. জড়িয়ে ধরার,
তাকে... আপন বলার।

তাইতো তুমি নিওনা,
নিওনা এ স্বপ্ন সরায়ে..
এ হোলো মোর প্রাণ,
জরায়ে রেখেছে আমায়,
আমার অভিমান।

তাই তো বেঁচে আছি এতদিন,
নিওনা এ স্বপ্ন কেড়ে,
আমি নিঃশেষ হব,
সব অথর.. জীবনহীন।

অন্তঃস্বত্তা বিগলিত,
মুশকিল ধরে রাখা প্রাণ,
ছিনিয়ে নিওনা স্বপ্ন আমার..
হয়ে যাব অবসান,
জরায়ে যে রেখেছে আমায়,
সে আমার অভিমান,
আমার সে,
ভালোবাসার সন্মান।।

Tags: Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

Thursday, September 12, 2019

উত্তরণ - Kobita (2019) Bengali Poetry

Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

হেরে যায়নি, হেরে যাবেনা কেউ কখনও..
কোনো নবক্ষনে, অনুশাসনে,
তিক্ত সমাজের মাঝে হলেও..
জন্ম সবার, উদার প্রাঙ্গণে।

বহুকাল বেরসিক..
মনুষ্যত্বের ছোঁয়া লাগা এই পোশাক,
সমাদরে সুযোগ চাই, নব যৌবন গড়ার।

স্বাধীন সত্তা বলে..
বর্বর কোনো জাতির অধীনে
নেই আজ আর..
নেই কোনো শিশু অত্যাচার,
কোনো নারীর মানহানি আর,
পীড়িতদের ধর্ষণরত কারাগার।
নেই কোনো ধর্মের নামের দোহাই দিয়ে..
জাতের বুকে ছুরি রেখে..
উশৃঙ্খলের সবল জবাব, সরব আজ অধিকার।

ছেড়ে আসা চাই..
সব ক্লেশ, সব দ্বেষ,
সেই পরাধীন খোলসটির সাথে।

অনেক বিরল ক্ষনপ্রাপ্তি,
যাহা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্বের অংশ,
যাঁদের সৃষ্টি ক্ষনেকের তরে..
যাঁহারা এখন নিষ্প্রাণ.. মহাপ্রাণ,
স্রষ্টার হৃদয়ে যাঁদের অবস্থান,
স্বাধীনচেতা ধরনী ফেরত চাইছে তাঁদের।

চাইছে আবার..
আনন্দঘন  আশাময় পরিত্রাণ,
গাইবে সবে সম-সাম্যের জয়গান।।


Tags: Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

Sunday, September 8, 2019

চলো পাল্টাই - Bangla Kobita (2019)

Kobita, Bangla Kobita, 2019, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love
চলো পাল্টাই - Bangla Kobita
তোমার দৃষ্টি আমায় ধার দেবে!
আমি যে তোমার মত করে দেখতে চাই..
এই পৃথিবীর বুকে, টিকে চলতে চাই..
অন্ধকারে ছিদ্র আলোর প্রকাশে,
কিভাবে পাও তুমি খুঁজে..
ভালোমানুষির আবরন !
দাও আমায় সে দৃষ্টি,
মিষ্টি চোখে, আমি নিজেকেও কিছুটা পাল্টাই।

দৃষ্টিনন্দন কিছুই পাইনা খুঁজে,
তুমি বা কি করে পাও !
বুজরুকি বন্ধুর অবাধ ব্যাবসা,
কিভাবে সামলে নাও।
শেয়াল কুকুরেরাও রাস্তা ঘাটে,
আজ কুড়োচ্ছে সন্মান,
গোলকধাঁধায় হোঁচট খায় যে,
সে অপার্থিব মুহ্যমান।
আহাম্মকের ঠেলার খেলায়,
রসিক হাঁটু গেড়ে বসে রয়,
তুমি বা কিভাবে সহ্য কর !
নাকি সেটাই,
উন্মাদ করা ভয়।

আমার চোখেতে নদীর স্রোতে,
লাশের ভাসান চলে,
তুমি বলো যদি বিশ্বাস করি,
গঙ্গা শুদ্ধ করে।
কারো বা স্বপ্ন রাস্তার বাটে,
টুঁটি ছিঁড়ে পরে রয়,
ল্যাংটো সমাজটা নাক না গলালে,
তোমার দৃষ্টিভঙ্গির জয়।

চলো পাল্টাই বলে সবাই,
মগজ ধোলাই করে,
সেখানেও বেশ টিকে গেছো তুমি,
শিখিও আমায় পরে।
সখের রাজা বিপ্লব এনে রাস্তায় অবরোধ,
গরীব মজুরের কাজে ছুটি দাও,
তুমি বড় অদ্ভুত।

মিষ্টি চোখে পাল্টে আমায় দিচ্ছো তুমি বেশ,
তোমার শেখানো বুলি বাতলে,
আজ আমি আর নয়, 
শুধু ভেবে ভেবে ভয় হয়, 
পাল্টে গেলেই, না হয় হয়ত..
গল্প তোমার শেষ।।



Tags: Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

Thursday, September 5, 2019

সবুজ ভালোবাসা - Bangla Kobita (2019)

Tags: Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

আমি এক দূর পাহাড়ের দেশে থাকি,
বন-জঙ্গলের আঁচলে মোড়া,
সবুজ মনের দেশ,
অচেনা কত মজা, বাহারি রঙের খেলা,
কত নাম না জানা পাখি দেখি বলত...
লাল, নীল, সবুজ.. হলুদ...
পরিচয়পত্র বইয়ের পাতায় না খুঁজলেও চলবে,
দেখেই তো চোখ ভরে ওঠে,
নাম না জানা কত্ত জন্তু জানোয়ার আছে.. মানুষও... আছে।

তবে জানো, সবার মুখেই হাসি...
বিরল, প্রাঞ্জল.. অদ্ভুত না!
সত্যিই আনন্দ কেউই খোঁজে না এখানে,
মনের সরোবর যেন পূর্ণ, গচ্ছিত রাশি-রাশি।

আকাশ বলো, বাতাস বলো,
সবাই কেমন সুন্দর, সতেজ
কত না ভাল লাগে, বলো..
প্রকৃতি যেন প্রাণ ভরে টিকে আছে এখানে,
ভালো লেগে, ভালোবেসে।

সত্যিই, আমি এই দূর পাহাড়ের দেশেই থাকি,
এখানে সূর্যদয়ের রূপোলী রূপ,
গাছের কোলে লুকিয়ে থাকে,
সাতসকালেই ভোরের হাওয়া..
কুয়াশা কণা ছড়িয়ে রাখে।
জানো, ঘুমের  ঘোরে...
মনের গ্রাম অকাতরে কেমন ডাক দেয়,
যেন আদরে মায়ের কোলে,
গেঁয়ো ছেলেটি, মাথা নুইয়ে দেয়,
বলে..আর একটু মা... একটু শুয়ে নিই।

আমি এই দূর পাহাড়ের দেশে থাকি,
কন্কৃট না হওয়া মনের দেশ,
কেমন যেন সবাই নির্ভেজাল এখনও পর্যন্ত,
আশ্চর্য বঞ্চিত যান্ত্রিকতার রেশ থেকে,
অবাক না!
কেমন করে যে বাঁচে এরা... 
খোলা মনের বারান্দায়,
হাসে খেলে নির্দিধায়।

সবুজ মনের দেশ গুলি সব,
আমাদের প্রানবায়ুকে.. 
শুনেছি  প্রানবন্ত করে রাখে..
মডার্ন তকমা না লাগিয়েই,
মডার্ন শেকলে না জরিয়েই,
প্রান্তিক রেষারেষির বাইরে থেকেই,
কেমন করে পারে বলত..
কেমন করেই বা বেঁচে এরা..
অবাক, তাই নয় কি..!



Tags: Sobuj Valobasha, Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

Saturday, August 31, 2019

মহাকাল - Bangla Kobita (2019 Recitaion collection)

মহাকাল

Tags: Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love
Bangla Kobita (2019 Recitaion collection)
 

দক্ষযজ্ঞের সর্বশেষ আহুতি হল এই,
আজ সতী আর নেই...
সতী... আর নেই!
ঢলে পরেছে শেষমেশ রুদ্রের কোলে...
তিনি স্তব্ধ, নিথর জড়িয়ে বাহুডোরে...

রোষানলে জর্জরিত তাঁর, দেহ-মন-প্রাণ,
নীলাভ অনল আজ আনবে প্লাবন,
প্রশ্বাসে বিকশিত হবে দূর্লভ গড়ল,
তিনি স্তব্ধ, নিথর জড়িয়ে এখনও বাহুডোরে...!


তৃষ্ণা, প্রবল তৃষ্ণা, চাতক হয়ে উঠছে মন,
প্রেম তৃষ্ণা আজ নিঃশেষ,
রক্ততৃষ্ণায় কাতর হয়ে উঠছে তন
চারিদিকে দূর্বৃত্ত, দুঃসহ চোরাপথ, চোরাগলি,
তাতে হওয়া নর’বলি,
ভ্রূক্ষেপ নেই মাত্র, চাই শুধু বিচার।
শ্বশানের আশেপাশের রক্তপেশিহীন পিচাশ,
মুক্তকেশী প্রেতাত্মারা ঘিরে রেখেছে তাঁকে
তারা চায় শুধু নিষ্ঠুর প্রাণের বলি,
সব লাল-লাল, নীল-নীল,
অথবা, বিবর্ন করে উজার করে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ,
অশরীরী আত্মাকে শরীর মুক্ত করে,
ছুটিয়ে ক্ষান্ত হয় পথে, উপযুক্ত শাস্তি পাপীদের ঘরে ঘরে।

আজ আর সতী নেই...
ম্লান হয়ে রবে না কিছুই...
হবে সবাই রাঙ্গা-পথের-পথিক,
রোষের কবলে ছাই হবে সব, তুমুল কোলাহলে।
ক্রুদ্ধ রুদ্র, রুদ্রবস্ত্র মাত্রই... আজ তাঁর পরিধেয়,
রুদ্রঅনল ছড়িয়ে বিনষ্ট করতে চায়, সে সব সৃষ্টি,
করতে চায়, আরও অনেক দক্ষযজ্ঞ ধংস,
শেষ করে দিতে চায়,
বক্ষবিদির্ন রক্ত আভার সেই দীপগুলি,
লাল মুখোসের পেছনে লুকিয়ে থাকা,
ফেকাশে মুখগুলি।

আজ নিয়ন্ত্রনের আর কেউই নেই...
তাই, তাণ্ডবে বেসামাল হবে এ ধরা,
তাই, আজ তিনি উন্মুক্ত হৃদয়হীন যন্ত্র,
শপিত সমাজের, বুক চিরে ধংস চায়,
পাঁজর ফেরে রক্ত খায়,
ত্রিশূলে বিদ্ধ আঙ্গিক অংশ আকাশকে দেখায়,
রক্তগুলো ঝেড়ে গড়তে চায় এক,
নতুন প্রাকার, এক কল্পিত ভবিতব্য।
উন্মুক্ত কেশবিন্যাসে,
অসতীত্বের অভিশাপ কেড়ে, নিংড়ে,
আশীর্বাদ বানাতে চায় সব,
তারপর দিতে চায় তাতে... প্রাণ,
রক্তহীন জীবের প্রাণ...
অক্ষয়, নিষ্কলুষ মানবীয় প্রাণ।

তাকে কাঁদাতে চায়, তাকে হাসাতে চায়,
শেখাতে চায়, মান-হুস হবার ভাষা।
দু-হাত প্রসারিত করে, হাসতে চায় সে নিজে,
যতখানি সম্ভব, জোরে... ত্রিলোক বিজয়ীর মত।
পর্বত শৃঙ্গকে নিজ পদতলে রেখে, ফুঁপিয়ে নয়,
চিৎকার করে... করজোড়ে কাঁদতে চায় সে...
যেন, আর না হয় কেউ সতী!
আর কেউ না হয় যেন মহাকাল

বাসনাহীন মনটি, আর নয় রহস্যময়,
উজার করে লয়, সে হাতের মুঠোয়,
গভীর নিশ্বাস নিয়ে, দম বন্ধ করে সে,
নব অস্তিত্ববানদের আশায়,
নতুনত্বের ভাষায়, চির-শুদ্ধ হয়ে থাকুক এ পৃথিবী।।


Tags: Mahakaal, Kobita, Bangla Kobita, Valobasar Kobita, Premer Kobita, Bengali Kobita, Kavita, kavita kavita, Bengali Poetry, Bengali Poem, Bengali Poem of Love

Saturday, August 24, 2019

মৃত্যুদূত - Bangla Kobita (Mrityudut)

মৃত্যুদূত - bangla kobita
মৃত্যুদূত - Bangla Kobita


রাতের অন্ধকারকে অগ্রায্য করে,
ছুটে এসে ম্লান মুখে,
দিগন্ত বিস্তৃত শক্তি দিয়ে... টেনে নেয় একটা প্রাণ।

খট্-খট্‌ দরজার কোন শব্দ নয়,
নেই কোন একাধিক ভয়,
এক নির্দিষ্ট সময়ে, এক নির্দিষ্ট আত্মাকে,
তুলে নিয়ে যায়... এক আগন্তুক মৃত্যুদূত।

আমি মরব না, মরতে চাই না...
কিন্তু মৃত্যু কি আমায় ছাড়বে!
কোন মমত্বতা রক্ষার্তে দংশন করবে না!
কিন্তু না...
একাএক যখনি বলি, বাঁচতে চাই হে কলি...
তখুনি মৃত্যুর ধ্বনি বেজে ওঠে,
হৃদস্পন্দন যেন অতিক্রম করতে চায় তার নিজস্ব গতি,
সব মায়ার বাঁধন, অসার হয়ে পরে রয়...।

আমার অতীত, বর্তমান আর হয়তবা কোন অ-ভবিষ্যতের ভয়,
আমাকে জড়িয়ে নিংড়োতে চায়,
আমি অসহায়, আমি নিরীহ,
আমি সম্পূর্ণ নিষ্পাপ না হলেও, নিষ্পাপ,
কিন্তু তবুও মৃত্যু গ্রাস করতে চলেছে আমায়...।

হয়ত আমার সামনে কেউ আছে,
হয়তবা নেই,
হয়ত আমি বাহ্যিক পূর্ন নই এখনও,
সে... সবি হবে আমার কর্মে নির্ধারণ,
ঘটে যেতে পারে যে কোন রহস্য,
অস্তিত্তবানদের একান্ত আপন... সেই অনন্ত সত্য।

আমায় কেউ বোঝেনি,
কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি, আমি কি চাই সে মৃত্যু!
আমি যেন অন্ধ, সম্পূর্ন নির্বোধ এক প্রাণী...
তাই মানতে চাই না সেই মৃত্যু... সেই অন্তিম কাহিনী।

আমার দৃষ্টি, আমার শ্রবণ, আমার শক্তি,
সবি লুপ্ত প্রায়...
আমার স্পর্শচেতনাও যেন উধাউ,
আমি কি তবে মৃত্যু-পথ-যাত্রী...
আমার কি তবে এই শেষ।
সে লীন মুখে সম্বোধন করে,
অবসরের মালা নিয়ে, এগিয়ে আসে...
সেই সমাপ্তি!

হায়, এই মৃত্যুই করছে আমায় গ্রাস,
হাজার চেষ্টা হল ব্যার্থ,
আমার অতীত আমার স্মরণে উঁকি দিচ্ছে...
অতীতে দেখা ভবিষ্যতের কত স্বপ্ন...
মনে পরে যাচ্ছে আজ,
একাকার হয়ে যাচ্ছে দিবারাত।

হঠাৎ... আর কিছু নয়,
চোখে ভেসে ওঠে কালের রূপ,
তারপর...
শুধু মৃত্যু আর মৃত্যু...
কেবল মৃত্যু,
ধুলোর কনায় বিলিন আমি...।



Please share this Bangla Kobita "Mrityudut" and visit my YouTube channel named as "satyapriyo das" to listen the Recitations. Hopefully, you will like it. Thanks in advance. 


Tuesday, June 18, 2019

Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-3 End



অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)

(৩)

ইতিহাসের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে সবাইকেই হয়, নাহলে মানুষ চলবে কি ভাবে। তবে নিকৃষ্ট স্মৃতি বড়ই নিষ্ঠুর, পিছুটান ছারতেই চায়না। প্রথম ঘোষাল এখনও বাজারে। বাজারের থলেটা এখনও তার বগল চাপা। পকেটে যে টাকা নিয়ে
Adekha Upakhyan-bangla Story
বেড়িয়েছেন তাঁর হিসেবে, এ বাজারের দাম অনুপাতে, তিনদিনের বাজার হয়ে যাবে। তাই এমন দিনে মাছ নিয়ে অর্থব্যায় করাটা তাঁর মানায় না। অনেক পুরনো চাবি দেওয়া হাতঘড়িটা দেখে বুঝতে পারেন বেশ দেরি হয়ে গেছে আজ। রাস্তায় বেড় হয়ে তাঁর কি যে হল, পুরনো স্মৃতি বারবার রাস্তা রুখে দাঁড়াচ্ছে। বাজার করার ইচ্ছেটাই বরং তাঁর নষ্ট হয়ে গেছে। এই দূর্লঘ্ন স্মৃতিগুলোকে ডুবোতে চাইলেও বারবার ভেসে ওঠে অকৃতঘ্নের মত, যেন অবিনশ্বর এরা। এসব স্মৃতি আজকাল এ বৃদ্ধের চক্ষুশূল। কিন্তু এড়িয়ে যেতে চাইলেও যেন পারেন না এড়াতে। তখনই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিকে। বারবার দীর্ঘশ্বাস বেড় হয়ে আসে অযাচিত শব্দে। 

ঘড়িটার দিকে তাকাতেই মনে হয় বাজার করার কথা। পছন্দ অপছন্দের কোন বালাই নেই, এবার আর কোন পরিচিতের দোকান নয়। নতুনদের সাথে নতুনভাবে দর কষাকষি করে ব্যাগটার অংশবিশেষ ভর্তি করে ফেললেন শেষমেশ। পকেট ফেরত টাকাটা রেখে ব্যাগটা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে চলে এলেন সেই বিভীষিকাময় খাদ্যরাজ্য থেকে। এতটুকু বাজার আজ বড় ভারী বোধ হয় তাঁর। তবুও তো দু-তিন দিনে সবটা শেষ করে ফেলবে বাড়ির বড় বড় মুখগুলো। একাএক দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে তাঁর। মাথার উপর তিন তিনটে বিয়ের দায়িত্ব বহন করা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার যখন চাকরিও শেষ হয়ে যায়, বোধহয় নিজেকে সাবলীল করে রাখাটা কঠিন হয়ে পরে। কালোই জগতের আলো – একসময় আদর করে বলা হত তাঁর তিন মেয়েকে। আজ মনেহয় যেন অভিশাপ। বারবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ‘ভগবান কেনই বা বড়লোকদের ঘরেই আলোকোজ্জল জ্যোতিষ্কের জন্ম দেন আর গরীবের ঘরে কালো! গরীবের জ্বালাকে কি আরো একটু উষ্কিয়ে দেবার জন্য!’

‘চাকরি চলে গেছে, ছেলে নিঃশেষ হল, টাকা পয়সার অভাবে মেয়েদের বিয়ের কথা চলছে না, রাতের ঘুম উড়ে গেছে বহুদিন যাবৎ - আর কি কি ছিনিয়ে নিতে চায় সেই ঈশ্বর নামের প্রস্তর!’ হাজার হাজার ঝটিকা বয়ে হাটতে থাকলেন প্রথম ঘোষাল। সত্যিই প্রকৃতি বড় বিরূপ তাঁর প্রতি। যাকে তিনি ভরসা করতে চেয়েছেন তারাই তাকে ঠকিয়েছে... সেই ভাইদের থেকে ছেলে পর্যন্ত, সব। ভগবান কি সত্যিই এত নিষ্ঠুর!

বাড়ির দরজায় এসে কড়াঘাত করতেই দরজা খুলে দিল ছোট মেয়ে। বাবার হাত থেকে ব্যাগটি নিয়েই জড়িয়ে ধরল তাঁকে। এই তাঁর ছোট মেয়েটি বড়ই আদুরে। তাকে কাছে পেলেই সব রাগ, সব দীর্ঘশ্বাস মুহুর্তেই উড়ে যায়। বলতে ঘরটাকে অদ্ভুত জাদুমন্ত্রবলে জীবিত করে রাখে সে, সবসময়। ছোট বাড়ির দরজা খুললেই এঘর সেঘর। রান্নাঘরটি পর্দার আড়ালে একদম শেষে। ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে একবার ভাল করে দেখলেন তিনি। এ তো সেই, তাদেরই তো একজন, যাদের নিয়ে তাঁর বর্তমান, তাঁর ভবিষ্যত। সারা রাস্তায় কি সব কল্পনা করছিলেন তিনি, অবাস্তবিক। ছোট মেয়েটির হাসিতেই তো সুখের সারা সম্পদ লুকায়িত। এই তিন মেয়ে তো তাঁর মায়েরই প্রতিরূপ। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন তাঁর আদরের মেয়েকে। এই মেয়েই প্রথম বাবুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে।
‘...এত বাজার কে আনল!!!’
আশ্চর্য, হতবাক বাবার গম্ভীর প্রশ্ন নিনাদ হয়ে বেজে উঠল বাড়ির ভিতর। বড় মেয়ে, মেজ, সবাই দৌড়ে এল। এত বাজার যে কে আনল, তার উত্তর দিল না কেউই। যা বলল তা শুনে প্রথম ঘোষালের চক্ষুস্থির। হাসির ছন্দেই তাঁর সেই ছোট্ট মেয়ে তাকে জড়িয়ে বলল “বাবা, আজ দুটো চিঠি এসেছে... একটা বড়দির এপয়ন্টমেন্ট আর...”
আর শোনার আগেই প্রথম বাবুর চোখে জল এসে গেল। তিনি কি বলবে বুঝতে পারলেন না। শুধু অবাক নয়নে চাইলেন বড়’র দিকে। বাকিটা সেই বলল বাবার পা ছুয়ে “আরেকটা খবর... মেজো’ কে যারা দেখে গেছিল, তারা বিয়েতে রাজি।” রীতিমত চমকে ওঠে তাঁর সর্বাংগ। ‘এত কিছু একসাথে... এও কি সম্ভব!’ চোখের জল আর বাঁধ মানে কোথায়। একাএক প্রসারিত দুবাহুতে সব্বাইকে এক্কেবারে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অজানিতেই হাত জোর হয় অদৃষ্টের উদ্দেশ্যে।

অদৃষ্ট, এই অদেখা যদি সবাইকে এভাবেই শান্তির সমাপ্তি দিতেন কতই না সুখি হত এ পৃথিবী। শতাধিক কষ্টের পর এইটুকু শান্তি সবারই তো প্রাপ্য। কিন্তু সবাই কি পায়! সবাই কি চমকে ওঠে ঠিক প্রথম ঘোষালের মত, ঠিক যেমন করে চমকে দিয়েছে তাঁর জাজ্জল্যমান মেয়েটি। একদম অদেখা স্বপ্নের মত, অদৃষ্টের কৃপায়।।


***সমাপ্ত***

Sunday, June 16, 2019

Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-2


অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)

(২)

আকাশ ছুতে কে না চায়। কেউ চায় তা ঘুমের ঘোরে, কেউ বা চায় লাল বেলুন হয়ে নীল আকাশ ঘুরে বেড়াতে। কত স্বপ্ন দেখতে পারে মানুষ তার হিসেব নেই। কত স্বপ্ন যে ভেঙে যায় চোখের সামনে তারও হিসেব নেই। হিসেব নেই স্বপ্নপূরণেরও। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণ গড়ে হয়ত একজনের হয় কখনও। প্রথম ঘোষালের জীবন প্রাঙ্গণের দ্বিতীয় জন্মের প্রথম অধ্যায়ে যখন পুত্রসন্তান জন্মায়, অন্ধকার লোকারণ্যে যেন আলো দেখতে পেলেন বাড়ির সবাই। ব্যাগের পর ব্যাগ বাজার আসত তখন তাদের তিন ভাইয়ের যৌথ পরিবারে। আনন্দ উল্লাসের প্রাচিরহীন বারান্দায় আকাশ কুসুম স্বপ্নে সাজানো হয় সেই শিশুকে। আনন্দের প্রকাশকে রূপ দেবার জন্য নামও দেওয়া হয় – আলোক। তারপর সেই আলোক বড় হতে হতে আরও তিন উজ্বল কণিকা জ্বলে ওঠে ঘরে। কোন আক্ষেপ করেনি কেউ এই তিন মেয়ের জন্ম নিয়ে। মনকে আশ্বাস
Adekha Upakhyan-Story
দিয়েছিল এই বলে যে আলোকই বড় হয়ে তাদের জীবনে আলো জ্বেলে দেবে। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বোনদের বিয়ে দেবে, স্বপ্নমণ্ডিত আকাশে বিচরণ করাবে তাদের। এই সুবর্ণ স্বপ্নকে দুরের আকাশে দেখতে পেয়ে প্রথম ঘোষাল তাঁর ছেলেকে স্বস্নেহে, স্বযত্নে পড়াশুনার হাতে-খড়ি দিলেন। তবে অজানিতে কেবা হাসে তাঁর এসব কান্ড দেখে, যেন ঠিক তারপরেই অথৈ জলে পরে গেল তাঁর পরিবার। পরিবার বিভাজন নিজেদের মধ্যে এক ক্লেশময় সম্পর্কের সৃষ্টি করল। তৈরি হল এক অকল্পনীয় পরিস্থিতির। ভাগ্য তাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বেড় করে দিল তাঁর পৈত্রিক বাড়ি থেকে, ভিটাচ্যুত হলেন স্বপরিবার। তাঁর ভাইদের ব্যাবহার আর সেই আইনের নাছোড়বান্দা প্যাঁচগুলো বুঝতে না পেরে সর্বস্বান্ত হল প্রথম ঘোষাল। বাড়ি থেকে চিরবিদায় নিতে বাধ্য হল শেষমেশ এবং সেখান থেকেই শুরু হল তাঁর আত্মান্বেষণের কাহিনী। তাঁকে পারতেই হবে, এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এই নতুন পরিস্থিতিতে একমাত্র সম্বল তাঁর চাকরিটি আর আশার ফসল তাঁর ছেলে। যেভাবেই হোক আলোককে মানুষের মত মানুষ তৈরি করতেই হবে তাঁর। সব সম্পর্কের মুখে ছাই চাপা দিয়ে এগিয়ে গেল নতুন উদ্যমে নিজ পারিবারকে টিকিয়ে রাখার তাগিদে। পরিবারকে নিয়ে গড়ে তুললেন নতুন বাসস্থান। ছেলের পড়ার খরচ যোগালেন নির্দিধায়, ধার দেনার সাগরে নামিয়ে দিলেন নিজের সংসারকে। হয়ত ভগবান তাঁর পানে মুখ তুলে চেয়েছিলেন, তাঁর পরিশ্রমের সাথী হয়েছিলেন যাতে তিনিই জয়ী হোন। শারীরিক, মানসিক ভাবে খেটে তাঁরও প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে, তারুণ্যের ছল-ছল চোখে আলোক যখন এগিয়ে দেয় তার মাধ্যমিকের ফার্স্ট ডিভিশন আর চারটি লেটারের মার্কশিট আর স্কুল প্রদত্ত প্রশংসা পত্র। তাঁরও নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে, অন্তর গর্ব করে ওঠে, বুঝতে পারেন একাংশও হারেনি তাঁর চেষ্টা। অশ্রু বাঁধ ভেঙ্গেছিল তাঁরও, গোটা পরিবারই আনন্দের অশ্রুতে ভেসেছিল সেদিন। তারপরও এমন দিন আরও এসেছিল, প্রথম ঘোষালের বুকের উচ্চতা তখন কে দেখে। তবে, ছেলের টিউশিনির জোগান দিতে গিয়ে বাড়ির এককোনে মেয়েদের পড়াশুনা তেমন ভাবে আর চলে না, তারা অবহেলিত হয়ে পরে। পড়াশুনায় জোর না পরায় তারা তাদের দাদার মত ফার্স্টের পর্যায় আসতে পারে না। এটা তাদের দোষ নয়, ওরা যে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এটাই তাদের সিমিত আয়ের পরিবারের জন্য অনেক। এর চেয়ে আর কিই বা দিতে পারে এই পরিবারকে আপাতত। দাদা একটা চাকরি পেলেই তো স্বপ্ন রঙ্গীন হয়ে যাবে মুহুর্তে। বাবার তো এখনও উপার্জন চলছে, দাদার একটা কিছু হলেই একেবারে সোনায় সোহাগা হয়ে যাবে তাদের পরিবার। তাই তো আনন্দের স্বপ্নে মসগুল সকলে।

সত্যিই, সময়ের সাথে সাথে সে এক দারুন ছেলে হয়ে উঠেছে, যেমন চেহারা তেমনি স্বভাব-চরিত্র, আর তেমনি শিক্ষা। একে একে পরীক্ষার সব গণ্ডিই অবলীলায় উতরে গেল আলোক। প্রতিবারই পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই সে আপ্লুত করতে সক্ষম হয়েছে, তার একান্ত সাধনার ফসল ফলিয়ে। তার হাতের ফাইলটি এখন সম্পদে ভরপুর, বহু কষ্ট করে পাওয়া এসব তার যখের ধন। এক একটি সার্টিফিকেট দেখবার মতন। এখন এসবের মুল্যায়নের পালা। সব্বাই তার পানে চেয়ে, এবার হয়ত তাদের অপেক্ষা শেষ হবে, এবার হয়ত ভাগ্য মুখ তুলে চাইবে।

ফাইল নিয়ে আলোক বেড়িয়ে পরল বিশ্বজয় করতে, ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠল যে একটা ভাল চাকরি চাই। কিন্তু বাজার যে এত ব্যাস্ত, এত জনবহুল, তার জানা ছিল না। ফর্ম ভরতে ভরতেই কলমের কালি তার শেষ হয়ে এল। এমপ্লয়মেন্ট নিউজের দাম বাড়তে বাড়তে আন-এমপ্লইদের মাথার আরও এক যন্ত্রণা হয়ে দারালো। যেন কাগজের বাড়তি মূল্য ব্যালেন্সের জন্য একমাত্র বেকাররাই টার্গেট। সাথের অনেকেই চাকরি পেল, কেউ পৈত্রিক ব্যাবসায় আর কেউবা গেল বিদেশে। অনেক কিছুই বদলে গেল, কিন্তু আলোকের চাকরি হল না।

Adekha Upakhyan-Story
এদিকে, প্রথম বাবুর চাকরির মেয়াদ এই ফুরোলো বলে। এতোগুলো এতকষ্টে উপার্জিত সার্টিফিকেটের কোন মূল্যই পাওয়া যাচ্ছেনা এই ব্যাস্ত জনবহুল মহাসমুদ্রে। রাস্তায় নামলেই যেন কত সহস্র আলোককে দেখতে পাওয়া যায়, তার হিসেব রয়েছে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের জমাবদ্ধ খাতার কালো অক্ষরে। আর সেই সংখ্যা দিন কে দিন শুধুই বাড়ছে। ন-টার রাস্তা তো জনবহুল, ঘুরে ফিরে একি প্রশ্ন বারবার মনে আসে – ‘কত মানুষ তো চাকরি পায়, তারা কি সবাই তাদের ক্লাশের খাতায় একশ শতাংশ নম্বর পেয়েছে! আচ্ছা, সবারই কি সব কাজের এক্সপেরিয়েন্স আছে! তবে তারা ইন্টারভিউতে গেলেই সিলেক্ট হয়ে যায় কিভাবে!’ জানতে খুবই আগ্রহী আলোক। রাস্তার ট্রাফিক পয়েন্টের তলায় দাঁড়ালেই আশে পাশে কত অফিস ঘিরে ফেলে তাকে। প্রাত্যহিক কত লোক চাকরি করে এসব অফিসে, কলকারখানায়। সবাই পায় আর শুধু তার বেলাতেই নেই।  সংবাদপত্র ওলটালে তো মনে হয় যেন চাকরি হরিলুটের বাতাসা, কিন্তু বাতাসার বুকে যে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের নাম বসানো, তার খবর আগে জান্ত না সে। আলোক এ পৃথিবীর জটিলতায়, সংসারের প্রতি দায়িত্ববোধের আচমকা আবির্ভাবে দিশেহারা হয়ে পরে। বাড়িতে প্রায়ই পাওনাদারদের ভীর, তাদের চোখ রাংগানি মনোভাব, মস্তিষ্কে এক চরম বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাকে রুক্ষ করে তোলে। মাঝরাত পর্যন্ত মা’য়ের সাথে তার বাবা’র নিচুগলার আলোচনা, তাকে আরও সন্ত্রস্ত করে তোলে। সে ভয় পায় অদূর ভবিষ্যতের পরিণামকে কল্পনা করে। তার বোনেদের চোখে আশাভঙ্গের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পায় সে। ভয়ে থরথর কেঁপে ওঠে বাবার ক্লান্ত মুখখানা দেখলে। ক’দিন বাদে রিটায়ার করবেন তিনি, তারপর! এক বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়ায় সে। ঘরের বাইরের জগতটা যে এতটা প্রফেশনাল, এতটাই প্র্যাক্টিকেল, এতটাই যে স্কুলের বই’য়ের চিন্তাধারার উলটো, তা সে আন্দাজ করতে পারেনি। জীবনের এতটা পর্যন্ত বই’য়ের জগতটাকেই সমরূপ দুনিয়ার নিয়ম ভেবে তাতেই মন্ত্রমুদ্ধের মত এতটাই আবদ্ধ হয়েছিল যে, আজ এ দুনিয়ার নিয়ম কানুন তার কাছে যেন অচেনা ঠেকছে। বার বার তার মনে হচ্ছে যেন সে পিছিয়ে পরছে জীবনের দৌড়ে। ‘নিজেকে অপদার্থ বলে মনে হচ্ছে...’ বাড়ির ভিতরে ঢুকলেই নিচু হয়ে যায় তার মাথা। এতগুলো সার্টিফিকেট, বাক্সবন্দী করে রেখেছে – ‘এর চেয়ে দুর্ভাগ্য কি আর হতে পারে...’ বাড়িতে দু-মুঠো খেতে পর্যন্ত তার বুকে বাঁধে, বাবা-মা’য়ের চোখে চোখ রাখতে হীনবোধ হয়। মনে হয় সে যেন এই পৃথিবীর জঞ্জাল মাত্র। হন্যে হয়ে ঘুরেও একটা চাকরির জোগার করতে পারলনা সে। ‘অত্যন্ত হীনশ্রেণীর কাপুরুষ যে নিজের পরিবার থেকে কেবল নিতেই শিখেছে, দিতে পারেনি এক কনাও কোন সুখ...’

Adekha Upakhyan-Story
রাস্তায় নামলে, আলোক আর আজকাল চোখে দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। কোথায় যাবে, কি করবে, কার পদতল লেহন করলে একটা চাকরি পাওয়া যাবে, তার সংসারটাকে শেষমেশ রক্ষা করতে পারবে। কি করে বাবা-মা-বোনেদের মুখে যতসামান্য হলেও হাসি ফোটাতে পারবে। ভাবতে ভাবতে সমস্ত শরীরটা তার থরথর করে কেঁপে কেঁপে ওঠে। হাতের ফাইলটা বুকে চেপে ধরে হাউ-হাউ করে কেঁদে ওঠে সে... সমস্ত পৃথিবীটার একেবারে বিপরীতে যেন দাঁড়িয়ে আছে সে, একদম একা। তাকে মনে হচ্ছে, সাহায্য করতে কেউই এগিয়ে আসছেনা, আসবেও না। কানে বেজে ওঠে, যেন কেউ বলছে... এ পৃথিবীতে দুর্বলদের কোনও স্থান নেই, দুর্বলেরা মিশে যাবে রাস্তার ধুলোয়। আলোক যেন নিজেকে সেই দুর্বলই ধরে নিয়েছে। তার মগজ আর তার অধীনে নেই। জিগীষাবৃত্তি তার লোপ পাচ্ছে দিন পর দিন। সংসার-মানুষ-জন, সব থেকে পালাতে পারলে সে বাঁচে। এই জগতের ভয়াবহ চক্রভুজে ফেঁসে হাজারের মত, হাজার এক ভুক্তভোগী হয়ে গেল সে। তারপর দিশেহারা পথিকের মতই তার আপন-পরের সব আশা আকাঙ্ক্ষার আহুতি দিয়ে নিজের বাঁচবার পথ বেঁচে নিল। তার আশায় যারা বসে থাকত, যে পরিবার তাকে নিয়ে সোনার স্বপ্ন দেখেছিল, রেখে গেল তাদের জন্য নিজের নিষ্প্রাণ ঝুলন্ত দেহ। ...এই শেষ, সমাপ্তি হয় আলোক অধ্যায়ের, আর তার সাথেই আছড়ে পরে অনেক অনেক স্বপ্ন। পৃথিবীর বুকে ছেড়া কাপড়ের মত লুটিয়ে পরে আশার সিংহাসনচ্যুত তার সেই পরিবারটি, আলোকের পরিবারটি। এমন ভূমিস্খলনে নড়ে উঠল ঘরের প্রাচির, তার ভেতরের প্রাণীরা, উন্মাদ হয়ে গেল সেই আশার স্রষ্টা- আলোকের মা।


চলবে...