দহন (Dahan) # 2
রাঘব হতবাক হয়ে গেছে মিহিরের কথায়।তার চোখে হাজার প্রশ্ন।
“নেই বলবি বুঝলি...আধা পাবি তুই...আধা...বুঝলি...”
রাঘব নির্বাক, সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে অনবরত কলিংবেল বেজেই চলেছে। রাঘব মিহিরকে পাশে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল, দরজা খুলতেই সামনে সত্যিই পুলিশ। রাঘব সোজা হয়ে দাঁড়াল। দারোগা গর্জে ওঠে... “কি হল, এত সময় লাগে”
“না...মানে...ঘুমিয়ে...ঠান্ডা তো...” রাঘব সামলে নিল নিজেকে। তার আপাদমস্তক ভালকরে দেখে দারোগা হুঁশিয়ারি দিয়ে গেল “ রাস্তায় মানুষজন খুব কম, কুয়াশাও বেশ, আমরা আছি তথাপি বলে যাচ্ছি, ব্যাঙ্ক থেকে নব্বই লাখ...অনেক টাকা ডাকাতি হয়েছে, প্লান্ড গ্যং এর কাজ, শহর ঘেরাও এখন, পালাতে পারেনি, হাপিস হয়েছে কথাও। বড় কালো ব্যাগ, একজনের নীল জিনস অন্যদের কালো, ব্ল্যাক লেদার জেকেট পরা। এদিকেই আসা দেখা গেছে। চুরি গেছে লকারে থাকা একটা ঐতিহাসিক চাকু’ও। সাবধানে থাকবেন, হদিস পেলে বা দেখলে তৎক্ষণাৎ খবর দেবেন, ঠিক আছে...”
“...ঠিক আছে...” মন্ত্রমুগ্ধের মতন বলল রাঘব।
“আপাতত তো কিছু দেখেন নি...তাই না?”
“ন...না” এক নিষ্কুল ঘোরের মধ্যে রাঘব।
“ওকে, টেক কেয়ার”
পুলিশ চলে যেতেই পাশ দিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল মিহির। তারপর বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে তার চোখে চোখ রেখে বলল “হু...তুই যা বুঝেছিস ঠিক তাই।আমিও একজন...”
বন্ধ দরজার ওপর ছিটকে পরল রাঘব, মাথায় হাত দিয়ে বসে পরল দরজা ঘেষে নিচে। থরথর করে কাঁপছে সে...ঠান্ডায় নয়, ভয়ে।
“কি হবে এখন, তুই...পারলি কিকরে... আমি...আমি জেলে যেতে পারব না...তুই এখানে জানতে পারলে পুলিশ আমাকেও ধরে নিয়ে যাবে...” বিরবির করে বলে যাচ্ছে রাঘব।
মিহির কিছুই বলছেনা, সে সোজা গিয়ে সোফার নীচে লুকিয়ে রাখা ব্যাগটা নিয়ে এল।ব্যাগের চেইন একটানে খুলে ফেলল সে। রাঘব চমকে সেদিকে দেখে...উন্মুক্ত করকরা টাকার মেলা। স্বপ্ন রঙ্গিন করা রঙবেরঙের আতশবাজির খেলা। কক্ষনও দেখেনি সে একসাথে এত টাকা। মিহির সেখান থেকে কয়েক বান্ডিল বের করে তার সামনে ছুরে দিল। একাএক ছড়িয়ে পরল নোটের বান্ডিল আসে পাশে। রাঘবের সারা শরীর কাঁপছে, ভয়ে না উত্তেজনায়, সে ফ্যালফ্যাল চোখে মিহিরের দিকে তাকায়
“তুই ডা...ডাকাত, এ...এতটাকা... নব্বই লক্ষ...” রাঘবের চোখ রক্তশুন্য।
“না, তিন ভাগের এক ভাগ আমার কাছে”
“এ...এতোটাকা...চুরি করেছিস...”
এতক্ষণে পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে গেছে ঘরের। মিহির সামান্য উত্তেজনার সাথেই বলে চলল সব কথা... “বললাম তো মাত্র একভাগ আমার কাছে, বাকিরা উরে গেছে যে যার ভাগ নিয়ে। আমি আর পারছিলাম না, পারছিলাম না রাস্তার ভিখিরির মত বেঁচে থাকতে। বরদাস্ত করতে পারছিনা এই শোষক সমাজের নির্লিপ্ততা, তাচ্ছিল্লতা। এক শ্রেণী আমাদের পদদলিত করে ফুলে ফেপে উঠবে, কর্ণধারেরা সামাজিক বৈষম্যতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে যাবে, আর আমি কি না খেতে পেয়ে পচে মরব, সেটি হবে না চাঁদু...”
“তা...আমিও তো চলছি...এ ভয়ানক বাজারে”
“তোরও দিন আসবে, যখন এই বাজারই তোর নাগালের বাইরে চলে যাবে। তোকে বাঁচার কোন আধিকার দেবেনা আর এক শ্রেণীকে দেখবি তোর ভাগেরটা কিভাবে নষ্ট করছে। তখন জলবে গা... বেশ করেছি যা করেছি। তোদের সমাজেরই তো এ টাকা। যাদের কাছে ঘুরে ঘুরে পা ব্যাথা, মুখ ব্যাথা হয়ে গেল, এ তাদেরই টাকা”
কিংকর্তব্যবিমূর রাঘবের দিকে তাকিয়ে মিহির বলে “ ঘুষ দেবার টাকা ছিল না তখন, আমার সাথে ভিখিরির মত ব্যাবহার করেছে ঘুষের টাকায় রাজত্ব করা ওই মালিকেরা, দেখ দেখ, এখন আমার কাছে কত্ত টাকা”
“কিন্তু তাই বলে তুই চুরি করবি...ডাকাতি করবি!”
“হা হা...জানিস না... যেটা তোর, যা চেয়ে পাওয়া যায়না, তা ছিনিয়ে নিতে হয়”
“উপার্জনের জন্য তো তোকে কষ্ট করতেই হবে ভাই...”
“বইয়ের ভাসা...হু...থাক্ থাকগে... সবাই বড় হচ্ছে, ছলে বলে কৌশলে, আমি একলাফে গাছে উঠতে চেয়েছিলাম, দেখ উঠে আমি ফলও পেরে নিয়ে এসেছি” টাকার ব্যাগটা একাএক রাঘবের চোখের সামনে তুলে ধরল মিহির।
মিহিরের চোখের রং, কথার ঢং যেন পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রাঘব যেন কেমন নেশাগ্রস্ত হয়ে পরছে। উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে মিহিরের কথাকে খন্ডাতে পারছেনা। মিহির আরও কিসব বলে যাচ্ছিল কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
কান দুটো যেন বন্ধ হয়ে গেল তার, দিকবিদিক শুন্য হয়ে এদিক অদিক দেখছে সে। বুঝেতে পারছে না কোন দিকটা ঠিক। চোখে পরল মিহিরের প্রচন্ডভাবে নরতে থাকা ঠোঁট দুটো... যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষীণ শব্দ ভেসে এল অনেক দূর থেকে...
“তবে তুই আমায় বাঁচিয়েছিস, তুই আমায় নতুন জীবন দিয়েছিস, তোকে কথা দিয়েছিলাম দেব...এই তোর ফিফ্টি পারসেন্ট”
ব্যাগের থেকে থাক থাক নতুন নোটের বান্ডল বের করে রাখল সাদামাটা সোফাটির ওপর। চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হচ্ছে পুরনো ম্যাটম্যাটে সোফায় নতুন নোটের বাহার। বিনাখাটুনীতে অতগুলো টাকা... রাঘব আঁতকে ওঠে।
“না না লাগবে না... এ...এটাকা আমি ধরতেও চাইনা। দেখ, তুই আমার বন্ধু...তাই...কিন্তু...না না...উহু...”
একেবারে পিছনে ছিটকে যায় রাঘব।
“নেনে...ফিরিয়ে নে...এটাকা আমি ধরতেও চাই না”
“অতিভদ্রতা দেখিয়ে কোন লাভ নেই ভাই...জগতের অভদ্রতার শিকার হবি মাত্র”
মিহিরের ভয়ানক শব্দগুলি এক এককরে বিদ্ধ করছিল রাঘবকে। সে নিজেকে ঠিক রাখতে কিছুতেই পারছিল না। তথাপি...
“না না, এটাকা হজম করার ক্ষমতা আমার নেই, তুই বস...বস আমি আসছি...”
মিহিরের টাকা ধরে থাকা হাতটাকে ঠেলে সরিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল রাঘব।
................................................................................................
সাতসক্কালে বিছানায় শুয়ে কত ভালোলাগা স্বপ্নে মসগুল ছিল সে, দিনটা যেমন মনটাও তেমনি আলসে হয়ে ছিল। দিনটা এভাবেই পার করবে বলে ভেবেছিল। তারপর কি যে হল, মিহির বাইরের ঝড় বয়ে নিয়ে এল ঘরের ভিতর। ধংস হল সুন্দর সাবলীল সকালটা। বাথরুমের বাসিনে ভর দিয়ে দারিয়ে সামনের আয়নাতে নিজেকে দেখছিল রাঘব। কল খুলতেই বেসিনের উপর জল আছড়ে পরল।রাঘব হাত ধোয়, মুখে বার বার জল ছিটোয়, চুলে মাথায় ঘারে জল দিয়ে একটু সামান্য হতে চেষ্টা করে। চোখ বন্ধ করে বেশ কয়েকবার জলের ঝাপ্টা দেয়, দুহাতের পাতা দিয়ে মুখমণ্ডলের জল সরায়...কিন্তু একি... শরীর মন মাথা তো শান্ত হচ্ছে না, হাতটা কাঁপছে, চোখের বলয় কাঁপছে, হাত যেন সরতে চাইছে না মুখ থেকে, চোখের উপর থেকে। মস্তিষ্কের অন্তগহ্বরে যেন হটাত ফেটে উঠল বোমা... খোলা ব্যাগের টাকাগুলো একাএক ভেসে উঠল চোখের সামনে। বেসিনের সামনের ছোট আয়নায় সে যাকে দেখল তা সে নয়, এ তো আচেনা কেউ... তার চোখ লাল, অপার্থিব নেশা, মুখে আকণ্ঠ লোভ, রাঘবের শরীর শিরশির করে ওঠে। মনে হল মাথাটাকে কেউ জাপটে ধরে রেখেছে। জবরদস্তি কব্জা করতে চাইছে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ চক্র। একে একে আসতে থাকে হাজার চিন্তা, অনেক পরিকল্পনা। বারবার চোখে ভেসে ওঠে একপলক দেখা সেই অসামান্য ঐতিহাসিক ছুরি’টি। রাঘব বেসিন ধরে দাড়িয়ে, তার বড়লোক হবার নেশাটা আবার চাড়া দিয়ে উঠেছে। মিহিরের কথাগুলো বারবার ধ্বনিত হচ্ছে তার কানে। সে সেই ভাবেই দাড়িয়ে... তার চোখমুখে সৃষ্টি হল এক পৈচাশিক হাসি। মুখ নিচু করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। কুটিল মনস্তাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ শুরু হয়েছে তার ভেতর। আকাশে আবার মেঘ গর্জে উঠল...
চলবে....
“নেই বলবি বুঝলি...আধা পাবি তুই...আধা...বুঝলি...”
রাঘব নির্বাক, সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে অনবরত কলিংবেল বেজেই চলেছে। রাঘব মিহিরকে পাশে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল, দরজা খুলতেই সামনে সত্যিই পুলিশ। রাঘব সোজা হয়ে দাঁড়াল। দারোগা গর্জে ওঠে... “কি হল, এত সময় লাগে”
“না...মানে...ঘুমিয়ে...ঠান্ডা তো...” রাঘব সামলে নিল নিজেকে। তার আপাদমস্তক ভালকরে দেখে দারোগা হুঁশিয়ারি দিয়ে গেল “ রাস্তায় মানুষজন খুব কম, কুয়াশাও বেশ, আমরা আছি তথাপি বলে যাচ্ছি, ব্যাঙ্ক থেকে নব্বই লাখ...অনেক টাকা ডাকাতি হয়েছে, প্লান্ড গ্যং এর কাজ, শহর ঘেরাও এখন, পালাতে পারেনি, হাপিস হয়েছে কথাও। বড় কালো ব্যাগ, একজনের নীল জিনস অন্যদের কালো, ব্ল্যাক লেদার জেকেট পরা। এদিকেই আসা দেখা গেছে। চুরি গেছে লকারে থাকা একটা ঐতিহাসিক চাকু’ও। সাবধানে থাকবেন, হদিস পেলে বা দেখলে তৎক্ষণাৎ খবর দেবেন, ঠিক আছে...”
“...ঠিক আছে...” মন্ত্রমুগ্ধের মতন বলল রাঘব।
“আপাতত তো কিছু দেখেন নি...তাই না?”
“ন...না” এক নিষ্কুল ঘোরের মধ্যে রাঘব।
“ওকে, টেক কেয়ার”
পুলিশ চলে যেতেই পাশ দিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল মিহির। তারপর বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে তার চোখে চোখ রেখে বলল “হু...তুই যা বুঝেছিস ঠিক তাই।আমিও একজন...”
বন্ধ দরজার ওপর ছিটকে পরল রাঘব, মাথায় হাত দিয়ে বসে পরল দরজা ঘেষে নিচে। থরথর করে কাঁপছে সে...ঠান্ডায় নয়, ভয়ে।
“কি হবে এখন, তুই...পারলি কিকরে... আমি...আমি জেলে যেতে পারব না...তুই এখানে জানতে পারলে পুলিশ আমাকেও ধরে নিয়ে যাবে...” বিরবির করে বলে যাচ্ছে রাঘব।
মিহির কিছুই বলছেনা, সে সোজা গিয়ে সোফার নীচে লুকিয়ে রাখা ব্যাগটা নিয়ে এল।ব্যাগের চেইন একটানে খুলে ফেলল সে। রাঘব চমকে সেদিকে দেখে...উন্মুক্ত করকরা টাকার মেলা। স্বপ্ন রঙ্গিন করা রঙবেরঙের আতশবাজির খেলা। কক্ষনও দেখেনি সে একসাথে এত টাকা। মিহির সেখান থেকে কয়েক বান্ডিল বের করে তার সামনে ছুরে দিল। একাএক ছড়িয়ে পরল নোটের বান্ডিল আসে পাশে। রাঘবের সারা শরীর কাঁপছে, ভয়ে না উত্তেজনায়, সে ফ্যালফ্যাল চোখে মিহিরের দিকে তাকায়
“তুই ডা...ডাকাত, এ...এতটাকা... নব্বই লক্ষ...” রাঘবের চোখ রক্তশুন্য।
“না, তিন ভাগের এক ভাগ আমার কাছে”
“এ...এতোটাকা...চুরি করেছিস...”
এতক্ষণে পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে গেছে ঘরের। মিহির সামান্য উত্তেজনার সাথেই বলে চলল সব কথা... “বললাম তো মাত্র একভাগ আমার কাছে, বাকিরা উরে গেছে যে যার ভাগ নিয়ে। আমি আর পারছিলাম না, পারছিলাম না রাস্তার ভিখিরির মত বেঁচে থাকতে। বরদাস্ত করতে পারছিনা এই শোষক সমাজের নির্লিপ্ততা, তাচ্ছিল্লতা। এক শ্রেণী আমাদের পদদলিত করে ফুলে ফেপে উঠবে, কর্ণধারেরা সামাজিক বৈষম্যতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে যাবে, আর আমি কি না খেতে পেয়ে পচে মরব, সেটি হবে না চাঁদু...”
“তা...আমিও তো চলছি...এ ভয়ানক বাজারে”
“তোরও দিন আসবে, যখন এই বাজারই তোর নাগালের বাইরে চলে যাবে। তোকে বাঁচার কোন আধিকার দেবেনা আর এক শ্রেণীকে দেখবি তোর ভাগেরটা কিভাবে নষ্ট করছে। তখন জলবে গা... বেশ করেছি যা করেছি। তোদের সমাজেরই তো এ টাকা। যাদের কাছে ঘুরে ঘুরে পা ব্যাথা, মুখ ব্যাথা হয়ে গেল, এ তাদেরই টাকা”
কিংকর্তব্যবিমূর রাঘবের দিকে তাকিয়ে মিহির বলে “ ঘুষ দেবার টাকা ছিল না তখন, আমার সাথে ভিখিরির মত ব্যাবহার করেছে ঘুষের টাকায় রাজত্ব করা ওই মালিকেরা, দেখ দেখ, এখন আমার কাছে কত্ত টাকা”
“কিন্তু তাই বলে তুই চুরি করবি...ডাকাতি করবি!”
“হা হা...জানিস না... যেটা তোর, যা চেয়ে পাওয়া যায়না, তা ছিনিয়ে নিতে হয়”
“উপার্জনের জন্য তো তোকে কষ্ট করতেই হবে ভাই...”
“বইয়ের ভাসা...হু...থাক্ থাকগে... সবাই বড় হচ্ছে, ছলে বলে কৌশলে, আমি একলাফে গাছে উঠতে চেয়েছিলাম, দেখ উঠে আমি ফলও পেরে নিয়ে এসেছি” টাকার ব্যাগটা একাএক রাঘবের চোখের সামনে তুলে ধরল মিহির।
মিহিরের চোখের রং, কথার ঢং যেন পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রাঘব যেন কেমন নেশাগ্রস্ত হয়ে পরছে। উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে মিহিরের কথাকে খন্ডাতে পারছেনা। মিহির আরও কিসব বলে যাচ্ছিল কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
কান দুটো যেন বন্ধ হয়ে গেল তার, দিকবিদিক শুন্য হয়ে এদিক অদিক দেখছে সে। বুঝেতে পারছে না কোন দিকটা ঠিক। চোখে পরল মিহিরের প্রচন্ডভাবে নরতে থাকা ঠোঁট দুটো... যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষীণ শব্দ ভেসে এল অনেক দূর থেকে...
“তবে তুই আমায় বাঁচিয়েছিস, তুই আমায় নতুন জীবন দিয়েছিস, তোকে কথা দিয়েছিলাম দেব...এই তোর ফিফ্টি পারসেন্ট”
ব্যাগের থেকে থাক থাক নতুন নোটের বান্ডল বের করে রাখল সাদামাটা সোফাটির ওপর। চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হচ্ছে পুরনো ম্যাটম্যাটে সোফায় নতুন নোটের বাহার। বিনাখাটুনীতে অতগুলো টাকা... রাঘব আঁতকে ওঠে।
“না না লাগবে না... এ...এটাকা আমি ধরতেও চাইনা। দেখ, তুই আমার বন্ধু...তাই...কিন্তু...না না...উহু...”
একেবারে পিছনে ছিটকে যায় রাঘব।
“নেনে...ফিরিয়ে নে...এটাকা আমি ধরতেও চাই না”
“অতিভদ্রতা দেখিয়ে কোন লাভ নেই ভাই...জগতের অভদ্রতার শিকার হবি মাত্র”
মিহিরের ভয়ানক শব্দগুলি এক এককরে বিদ্ধ করছিল রাঘবকে। সে নিজেকে ঠিক রাখতে কিছুতেই পারছিল না। তথাপি...
“না না, এটাকা হজম করার ক্ষমতা আমার নেই, তুই বস...বস আমি আসছি...”
মিহিরের টাকা ধরে থাকা হাতটাকে ঠেলে সরিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল রাঘব।
................................................................................................
সাতসক্কালে বিছানায় শুয়ে কত ভালোলাগা স্বপ্নে মসগুল ছিল সে, দিনটা যেমন মনটাও তেমনি আলসে হয়ে ছিল। দিনটা এভাবেই পার করবে বলে ভেবেছিল। তারপর কি যে হল, মিহির বাইরের ঝড় বয়ে নিয়ে এল ঘরের ভিতর। ধংস হল সুন্দর সাবলীল সকালটা। বাথরুমের বাসিনে ভর দিয়ে দারিয়ে সামনের আয়নাতে নিজেকে দেখছিল রাঘব। কল খুলতেই বেসিনের উপর জল আছড়ে পরল।রাঘব হাত ধোয়, মুখে বার বার জল ছিটোয়, চুলে মাথায় ঘারে জল দিয়ে একটু সামান্য হতে চেষ্টা করে। চোখ বন্ধ করে বেশ কয়েকবার জলের ঝাপ্টা দেয়, দুহাতের পাতা দিয়ে মুখমণ্ডলের জল সরায়...কিন্তু একি... শরীর মন মাথা তো শান্ত হচ্ছে না, হাতটা কাঁপছে, চোখের বলয় কাঁপছে, হাত যেন সরতে চাইছে না মুখ থেকে, চোখের উপর থেকে। মস্তিষ্কের অন্তগহ্বরে যেন হটাত ফেটে উঠল বোমা... খোলা ব্যাগের টাকাগুলো একাএক ভেসে উঠল চোখের সামনে। বেসিনের সামনের ছোট আয়নায় সে যাকে দেখল তা সে নয়, এ তো আচেনা কেউ... তার চোখ লাল, অপার্থিব নেশা, মুখে আকণ্ঠ লোভ, রাঘবের শরীর শিরশির করে ওঠে। মনে হল মাথাটাকে কেউ জাপটে ধরে রেখেছে। জবরদস্তি কব্জা করতে চাইছে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ চক্র। একে একে আসতে থাকে হাজার চিন্তা, অনেক পরিকল্পনা। বারবার চোখে ভেসে ওঠে একপলক দেখা সেই অসামান্য ঐতিহাসিক ছুরি’টি। রাঘব বেসিন ধরে দাড়িয়ে, তার বড়লোক হবার নেশাটা আবার চাড়া দিয়ে উঠেছে। মিহিরের কথাগুলো বারবার ধ্বনিত হচ্ছে তার কানে। সে সেই ভাবেই দাড়িয়ে... তার চোখমুখে সৃষ্টি হল এক পৈচাশিক হাসি। মুখ নিচু করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। কুটিল মনস্তাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ শুরু হয়েছে তার ভেতর। আকাশে আবার মেঘ গর্জে উঠল...
চলবে....
Post a Comment