খরগোশের ডাইরি (Khargosher dairy)
প্রথম নামে'ই একটু আপত্তি থাকাটা ভাল। পরে... যুক্তি দিয়ে বোঝালে, মেনে নওয়া যায় বৈকি। যেমনটা পণ্ডিতমশাই... মানে 'স্যার' আর কি, বাবলুকে কথায় কথায় বলেছিলেন... নাস্তিকেরই চরম আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই ছোট্ট, গুবলা গাবলা মত দশ বছরের বাবলু'রই একটা পোষা খরগোশ আছে, তাকে নিয়েই গল্প। ও! আচ্ছা! গল্পই বা বলি কোন সাহসে, রিতিমত একটা আত্মজীবনি বলতে গেলে। তা...শোনা যাক কি বলে সেই বাবলুর খরগোশ...
আমি বাবলুর মত লেখা-লিখি করি না... ওসব ভাষা আমার জানা নেই। আমি অভিজ্ঞতা নামের কলম দিয়ে মন নামের খাতায় আমার কথা লিখি। জন্মলগ্ন, জন্মস্থান...এসব আজে বাজে আমার জানা অনাবস্যক। জন্মেছি যখন, চলতেই হবে... আর বেশি বোঝার দরকারই নেই। আসলে বলি কি, বর্তমান নিয়ে চলাই আমার বা আমাদের বিশেষ স্বভাব। যা মনে রাখলে জীবন চালানো মুশকিল অথবা যা মনে রাখাই মূল্যহীন, তার আসে পাশে মনকে ঘুরানো আমাদের স্বভাব বিরুদ্ধ। তবে যা জানি তা হল, আমি 'খাঁচা' নামক এক বাসস্থানের বাসিন্দা। বেশ বড় সর, ওয়্যালটা নেটের, ছোট্ট একটা দরজাও আছে। বাবলু ছাড়া এই দরজা খোলার পদ্ধতি কাউই জানেনা। সেটা খুলে গেলেই বুঝতে পারি ঘর থেকেও বাইরেটা কত্ত বিশাল, তবে এটাই বুঝিনা... ঘর চাই কেন! আমার থেকে অল্প একটু দূরে... সরি, খাঁচায় আরেকটি পরিবার থাকে। ওদের ভাষাটা আবার বেশ শক্ত, বোঝা মুশকিল। কিই বা খাওয়া ওদের যে মাঝে মধ্যেই প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ছেয়ে যায় আশপাশ, আমার শ্বাস ওষ্ঠাগত... দম বন্ধ করে থাকতে হয় অনেক্ষন। বাবলু বলে আমার প্রতিবেশিরা হল মুরগী, ওরা অমনি।
বাবলু আমাকে খুব ভালবাসে, মিস্টু বলে ডাকে। নামটা আমারও ভারি পছন্দ। ভালবাসা ঠাণ্ডার দিনে আরও বাড়ে যখন সে আমায় খাঁচার থেকে বের করে নিজের কোলের উপর শুইয়ে দেয় আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়াশুনা করে। ও এটাকে 'পড়া' বলে...! প্রথম প্রথম আঁতকে উঠতাম, কানে ঢং ঢং শব্দ হত। ভাবতাম... ছে রে দে রে বাবা... কেঁদে বাঁচি। বাঁচিনি... এখন অভ্যেস, পড়া শুনতে শুনতে একসময় হয়ত ঘুমিয়েই পরি। সে তার নিজের ঠাণ্ডা হাত দুটো আমার লোমশ শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে রাখে। শুনেছি... ওরা মানুষ, তাদের কথা আমায় আন্দাজ করে বুঝতে হয়। তবে বাবলু যে কি পড়ে, সেটা বোঝা দুষ্কর।
আমার প্রতিবেশীদের ঘরটা বেশ মজার, বেশ জমজমাট। আমার থেকে যদিও একটু নোংরা বেশি, তথাপি ভাল। কয়েকদিন হল কতগুলো নতুন অতিথি এসেছে, বড্ড চেঁচামিচি করে। তবে আমার খারাপ লাগেনা। ছানাগুলো বেশ আদুরে। মা ওদের খুব ভালবাসে। একটু এদিক অদিক হলেই, ব্যাতিব্যাস্ত হয়, তন্ন তন্ন করে খোঁজে। না পাওয়া পর্যন্ত চিৎকার- হাহাকার অবস্থা। কিন্তু দেখে আশ্চর্য হই যে তারপর ঘটনার কোন ছাপই থাকেনা তাদের চোখে মুখে। মুহূর্তে সব ভুলে গেল, যেমন চলছিল তেমনই চলছে। অতিরিক্ত চিন্তা না করাটাই মনেহয় তাদের স্বভাব। আমার ছোটবেলের কথা মনে নেই, আমার মা আমায় ভালবাসত কিনা জানিনা। তবে এখন যাদের কাছে আছি তারা যে আমায় ভালবাসে, সেটা নিশ্চিত। বন্ধ খাঁচার ভেতর দিয়ে যখন দেখি, রোজ সকালে প্রতিবেশীদের ছাড়া হয়, আর আনন্দে আত্মহারা হয়ে ডাকতে ডাকতে বেড়িয়ে যায়, বেশ ভালও লাগে। যাওয়ার সময় আমার ঘরটিতেও উকি দিয়ে যায়। কথাতো বুঝিনা, তবে টা-টা বায়-বায়... এমনি হয়ত কিছু বলে। ঘরে থেকে যাই আমি একলা। হাত দুটো সামনে ভাজ করে, মুখ সামান্য নুইয়ে, লম্বা কান দুটো আলসে ভাবে গায়ে ফেলে রেখে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকি বেড়িয়ে যাওয়া দরজার দিকে। ভাবি... আমিও যদি... । তবে একেবারে যে বেড়ই না, তা নয়। রোজ বিকেলে বাবলুর সাথে বাইরে যাই। তার সাথেই ছোটাছুটি করি। সে আমাকে নিয়ে যায় সবুজের দেশে, যেখানে অনেক ঘাস, দূর্বা'র বন, অনেক পাতা, আসেপাশে ফুল। সারা শরীরে তখন আমার আনন্দের নদী বইতে থাকে। আমি উত্সৃংখল হই, এদিক অদিক দৌড়াদৌড়ি, আমার আবোল তাবোল অঙ্গিমা ভঙ্গিমা দেখে বাবলুও হাসতে থাকে। বিকেলের এই সময়টা আমার কাছে ইহজগতের বরদান।
আমাকে নিয়ে বেড়লেই, বড় লম্বা লাঠি থাকে বাবলুর হাতে। কেন যে নেয় সে এটা প্রথমে বুঝিনি, বুঝলাম একটা ভয়াবহ ঘটনার পর। বলতে গেলে, সেই লাঠিটির জন্যই আজ আমি আছি। আমি সবুজ মাঠে পেট পূজোতে ব্যাস্ত। সবকিছুই ছিল সুন্দর। ঝড়ের মত একটা ঘটনা ঘটে গেল হটাত্। প্রচণ্ড গতিতে চোখের নিমিশে প্রকান্ড সেটি ছুটে এসেছিল আমার দিকে। বাবলু, সেই বাচিয়ে ছিল আমায়, হাতের লাঠিটি ছুরে দিয়েছিল সজোরে, আঘাত করল আতিদানবটির দিকে। আমার মাত্র এক হাত দূরে, ভয়ে সিটিয়ে গেছিলাম এই হটাত হওয়া ঘটনায়। সন্ধ্যের আগেই ঘরে ফিরে এলাম সেদিন। ঘরে চুপ করে বসে মনে করতেই চোখের পরদায় ভেসে ওঠে ঘটনার এক একটা ক্রম। আমার শারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। শ্বাস প্রশ্বাসে টান পরে, শিতল হয়ে যায় সারা শরীর। ... আমার থেকে অনেকগুন বড় হবে, নীল চোখ, কুটিল বৃহত মুখ, মনে হল অনেক্ষন ধরেই আমাকে দেখছিল। কি ঘটবে বা কি ঘটতে চলেছে, আমি টের পাবার আগেই হটাত্ বুনোবেড়ালটা আক্রমণ করে। ঠিক তখনই সেই লাঠিটা উরে আসে, বেড়াল ছুটে পালায়, আর আমি পাই এক নতুন জীবন।
আমাকে নিয়ে বেড়লেই, বড় লম্বা লাঠি থাকে বাবলুর হাতে। কেন যে নেয় সে এটা প্রথমে বুঝিনি, বুঝলাম একটা ভয়াবহ ঘটনার পর। বলতে গেলে, সেই লাঠিটির জন্যই আজ আমি আছি। আমি সবুজ মাঠে পেট পূজোতে ব্যাস্ত। সবকিছুই ছিল সুন্দর। ঝড়ের মত একটা ঘটনা ঘটে গেল হটাত্। প্রচণ্ড গতিতে চোখের নিমিশে প্রকান্ড সেটি ছুটে এসেছিল আমার দিকে। বাবলু, সেই বাচিয়ে ছিল আমায়, হাতের লাঠিটি ছুরে দিয়েছিল সজোরে, আঘাত করল আতিদানবটির দিকে। আমার মাত্র এক হাত দূরে, ভয়ে সিটিয়ে গেছিলাম এই হটাত হওয়া ঘটনায়। সন্ধ্যের আগেই ঘরে ফিরে এলাম সেদিন। ঘরে চুপ করে বসে মনে করতেই চোখের পরদায় ভেসে ওঠে ঘটনার এক একটা ক্রম। আমার শারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। শ্বাস প্রশ্বাসে টান পরে, শিতল হয়ে যায় সারা শরীর। ... আমার থেকে অনেকগুন বড় হবে, নীল চোখ, কুটিল বৃহত মুখ, মনে হল অনেক্ষন ধরেই আমাকে দেখছিল। কি ঘটবে বা কি ঘটতে চলেছে, আমি টের পাবার আগেই হটাত্ বুনোবেড়ালটা আক্রমণ করে। ঠিক তখনই সেই লাঠিটা উরে আসে, বেড়াল ছুটে পালায়, আর আমি পাই এক নতুন জীবন।
শেষ এখনও বাকি...
Post a Comment