Theme images by caracterdesign. Powered by Blogger.

Me and my poems

দহন (Dahan)


Story, murder, suspense


ঘরে লক্ষ্মী, নারায়ণ, সরস্বতী কেউই নেই, মানুষটা পাষণ্ড। মূল্যবান টাকার চারকোনা রূপটাই তাকে পাষণ্ড বানিয়েছে। এই অতিমাত্রিক নেশাই তাকে দূর করে দিয়েছে তার সংসার থেকে। মনকে মর্মান্তিক করে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে অজান্তিক স্বপ্নের এলাকায়।

এক দুরূহ প্রাচীরময় বদ্ধ ঘর, আবদ্ধ তার প্রান সারাক্ষণ ছটফট করছে খোলা আকাশ দেখবে বলে, কিন্তু পারছে না কারনবসত কোন ভয়ে। নাম-রাঘব, অবস্থান-বর্তমানে এক জীর্ণ ইটপাথরের তৈরি বাড়ি। যান্ত্রিক জীবনের সুকঠোর স্পর্শে সে আজ এক অজ্ঞাত অধ্যায়ের সুপরিচিত রূপ মাত্র।

লোড, লোড, লোডশেডিঙে মানবজীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। সেদিনও হঠাৎ অন্ধকার, এমনকি নিজের হাতটাও খোঁজা বৃথা।অন্ধকারের দূর্গমতা ও প্রাচুর্যের অভাব বাইরেও।...ঘরের ভেতরে খচমচ শব্দ-কাগজপত্রের, টুংটাং শব্দ ঝনঝনে রূপান্তরিত হয়ে ভেঙ্গে পরল টেবিলে হাত লেগে। খুজে খুজে একটি দেশলাই পেল রাঘব...ছস্‌স্‌স্‌স্‌। অন্ধকারময় ঘরটিতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ একটি দেখা যায়।আলোকদ্ভাসিত হয়ে মুহূর্তের মধ্যেই আবার ডুবে যায় অসীম অন্ধকার রাজ্যে। ...কাঠি গুলো সব বাজে...রাঘব কর্কশ ভাবে চেঁচিয়ে ওঠে। একাংশে বারুদাবৃত দিয়াশলাই কাঠি নামের স্ফুলিঙ্গ বর্ষণকারীর আবার ঘর্ষণের শব্দ হয়...না এটাও বাজে। এককোণে একটি বিড়াল বসে, রাঘবের বিলম্বিতায় সেটি বকা দিয়ে ওঠে। রাঘবও অশ্রাব্য কিছু খেঁকিয়ে ওঠে। ছস্‌স্‌স্‌স্‌... অন্ধকার চিরে আগুনটাকে ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ল্যাম্পের দিকে। জ্বলে ওঠে সেটি, রাঘব চমকে ওঠে হটাত। এ ঘরে মানুষ বলতে সে একা, তার পেছনেই এক বিশাল ছায়ামূর্তি মাত্র। বোধশক্তিহীন বিড়ালটি ডাকতে ডাকতে সেই বিক্ষিপ্ত ছায়ার দিকে এগিয়ে যায়। অস্ফুট চিৎকারে রাঘব ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেয় আলো।

ঘটনাটি নতুন নয়, কিন্তু রাঘব অভ্যস্ত হতে পারেনি এখনও। এ যেন তার থেমে যাওয়া জীবনের বিকৃত অতীতের হাত যা পিছু করে বেড়ায় সর্বক্ষণ তাকে। যার ফল-পাগলামি, মেন্টাল ডিসঅরডার। চোখ দুটি দিনকেদিন স্ফিত হয়ে যাচ্ছে, আর হবেই না কেন, রাতে ভালো ঘুম হয়না, চোখ বুজলেই দেখতে পায় তার অতীতকে, সেই সব নৃশংস ঘটনাগুলোকে, যা তাকে তারনা করে বেড়ায় সবসময়। অবস্থা বেহাল দেখে, সম্পর্কছিন্ন কিছু বন্ধুরাই তাকে ধরে বেঁধে নিয়ে গেছিল মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। সব শুনে তিনি বললেন-
“ব্যাপারটা আজকের জীবনের, এ যুগের যান্ত্রিক জীবনের প্রতিফলন মাত্র। জাস্ট রিফ্লেকশন...আর কিছু নয়।
কিন্তু সবটা শুনলেও, সব শোনা হয়ত হয়নি আসলে। কেননা সব, একদম সব বলা হলে তবে তো! তাছাড়া ডাক্তারের কথার উল্টোটাও তো হতে পারে। যেমন, রাঘবের কোন কাজের প্রতিফলন ঘটেছে তার আজকের জীবনে...জাস্ট অপোসিট রিফ্লেকশন।

............................................................................................................

এমনিতেই শীতকাল, তার উপর আকাশে কালো মেঘের সমাগম ঘটেছে ধীরে ধীরে। দূরে যে কোথাও ব্জ্র-বিদ্যুতের মাতলামি চলছে তা নিশ্চিত। সময়টা মধ্য ডিসেম্বর, সালটা আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে হবে। খুব স্যাতস্যাতে ঠান্ডা, সকাল থেকেই কুয়াশা, দিনটা একদম বাজে। মধ্যবয়সী রাঘব শুয়ে, শীতকালটা পারলে সে ঘুমিয়েই কাটায়, তার উপর আজ রোববার। খামখেয়ালিপনায় নির্লিপ্ত চাকরীর দোকানটিও বন্ধ, যার কর্মচারী বলতে মালিক ছাড়া সে একা। এই ব্যাচেলার মানুষটির ঘরটি অগোছালোই থাকে। কিন্তু, এক লাফে গাছে উঠে বড়লোক হবার কীট কিলবিল করে সর্বক্ষণই তার মাথায়। তবে আপাততের জীবন তাকে ছাড়তেই ছায় না, গাছে ওঠা আর হচ্ছে না, বারবার পিছল খাচ্ছে।  তবে ব্যাথা ভুলতে সিনেমার হিরোদের মতন সে নেশা করেনা, জুয়া খেলে না। মাতাল হয়ে যে স্বপ্ন দেখা বৃথা তা সে জানে। লেপ জরিয়ে শুয়ে শুয়ে এসব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কি এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল। বিরক্তিময় মুখটা নিয়ে উঠে এসে দরজা খোলে সে। পরনে ব্লু জীন্স, পায়ে কালো বুট্‌, লেদার জ্যাকেট, হাতে কালো গ্লোভস, কালো লেদার ব্যাগ, চোখে কালো চশমা আর মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে একজন দাড়িয়ে সামনে।রাঘব ঢং ঢং করতে থাকা ওয়াল ঘড়িটার দিকে দেখে, মাত্র নটা। সামনে তার পুরোনো বন্ধু।
“মিহির...তুই! এত্ত সকালে!বিরক্ত করার আর সময় পাস না...”
“তুই আর...আলসি...” এই বলেই মিহির তাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে্র ঢুকে পরল।
“কি দেখছিস, নে নে দরজাটা বন্ধ কর, খুব ঠাণ্ডা লাগছে...”
“কিরে এত কাঁপছিস কেন, এবার অনেকদিন পর এলি...সব ঠিক আছে তো!”
ঠাণ্ডা একটা শিহরন সত্যিই দরজা বয়ে ঘরে আসছিল। রাঘব সেটি বন্ধ করে এগিয়ে আসে। আবার বলল...
“এত ঠাণ্ডা লেগেছে!”
“বলিস না, গেছিলাম এক জাগায়, আসতে আসতে বডি প্রেসার কমে গেছে বোধহয়...” মিহির হাসল।
বেশ বড় করে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে একটা, আবছা অন্ধকার দুনিয়ায় সামান্য আলো ঝলকে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জোর আকাশ ফাটা শব্দে কেঁপে উঠল সারা ঘর। মিহির স্বভবতই মিশুকে, খুবই অল্পসংখ্যক চেনাজানার মধ্যের একজন, অই...পুরনো বন্ধু বলা যেতে পারে। তাই সে হটাত এসে জোটায় রাঘব সামান্য অপ্রস্তুত। মিহির সোফায় বসেই বলল...
“যদি কিছু মনে না করিস, তোর সোফাটাতেই একটু শুতে পারি রে...”
“তা... আর বলার কি, নে শো...”
মিহির বসে বসেই জুতো আর জ্যাকেট খুলে সোফার ওন্য পাশে রাখতে যাচ্ছিল কি এমন সময় কিছু একটা পরার শব্দ হল হটাত, তাও আবার রাঘবের পায়ের কাছেই। হুরমুরিয়ে মিহির সেটা কুঁড়াতে যাচ্ছিল কি রাঘব উঠিয়ে ধরল সেটা।
“বাঃ দারুন তো, এক্‌সেলেন্ট কারুকার্য তো, কোথায় পাস রে এসব, লাইফে ফার্স্টটাইম দেখছি... এ জিনিসে এমন কাজ...”
রাঘবের হাতে নক্সাকরা, ভালোকরে বললে নক্ষত্রখচিত বেশ সুন্দর একটি ছুরি। বেশ ভাল করে দেখে এগিয়ে ধরল মিহিরের সামনে... “নে ধর...সামলে রাখিস এটা, বেশ দাম হবে মনে হচ্ছে... পুরোনোআমোলের রাজা রাজরার সম্পত্তি নিকি রে!” বলে হাসি মুখে আর একবার ভাল করে দেখল সেটা।
“হু...হবে হয়ত...এক বন্ধু দিল আর কি” রাঘবের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নিজে একবার দেখে মিচ্‌কি হাসে মিহির।
“কোথা থেকে আসা হচ্ছে তোর এত সকাল সকাল, বাপরে স্যুট্‌ বুট্‌ পরে, অতবড় ব্যাগ নিয়ে... কোথাও যাচ্ছিস না আসছিস?”
একাএক এমন প্রশ্নে চম্‌কে ওঠে মিহির। সে অনবরত কথা বলতে পারে, কিন্তু আজ জানি তার কি হয়েছে, মনে হচ্ছে ওর মাথা কোথাও আছে আর মন কোথাও। কালো লেদার ব্যাগটা সোফার এক পাশেই ছিল, মিহির সেটাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল “না... যাবার, মানে আমি... শহর ছাড়ছি”
“শ...হ... মানে!!!”  
“অনেক তো হল রে এ শহরে, তোর তো তথাপি কিছু একটা হিল্লে হল, চাকরী করছিস, আর আমি তো ফিউস্‌। এবার একটা চান্স যখন পেয়েছি আর...” বলতে বলতেই থেমে গেল মিহির।
“চান্স! মানে!কি জিনিস!কি পেলি রে...” উতগ্রিব রাঘব নিজেও একটা ভাল সুযোগের জন্য হন্যে হয়ে অপেক্ষা করছে, মিহিরের কথায় সেও তাই আগ্রহী হয়ে উঠল।
“আরে না...মানে ভাগ্যপরীক্ষা আর কি” মিহির সামান্য হোচট্‌ খায়, নিজেকে সামলিয়ে সোফা থেকে উঠে বসে সে। রাঘবও তার পাসে এসে বসে।
“চান্সের সঙ্গে ভাগ্যপরীক্ষার কি সম্পর্ক!একটু ঝেরে কাশ না ভাই...”
“আছে...বৈকি।মানে...”
 “কিছু নিশ্চিত পেয়েছিস তুই...ফরেন এ কিছু হল কি, ভাগ্য করে পেলে আমাকেও একটু ভাগ্যে জুটিয়ে দিস ভাই...”
“ না না না... তেমন কিছু নয়... কাজ হয়ে গেছে... সময় এলে...পরে...”
বাকিটা বলতে যাবার আগেই আকাশে বাজ পরার মত ডোর বেলটা বেজে উঠল। আরেকবার বাজল, আবার বাজল। এত রোমাঞ্চিত আসোর ভেঙ্গে যাওয়ায় রাঘব দরজায় দন্ডায়মান সেই মহান মানুষটিকে রুচিশিক্ষা দেবে বলে ক্ষিপ্রবেগে দরজার দিকে এগিয়ে আসছিল, অমনি একলাফে নেমে দৌরে এগিয়ে গেল মিহির হাতের কালো ব্যাগটাকে সোফার নীচে ফেলে। বড় বড় চোখ করে অস্ফুট বলে ওঠে “...সর্বনাশ!”

রাঘব হতভম্ভঃ, অবাক, নিস্পলক, মিহিরের দিকে চেয়ে আছে।আবার কলিং বেল, আবার, আবার...। মিহির দুহাত দিয়ে জাপটে ধরল রাঘবকে রাঘব! সর্বনাশ! ...পুলিশ!
“কি...পুলিশ!”
আশ্চর্য রাঘব তবুও দরজা খুলবে বলে এগচ্ছিল...আবার ঘনঘন বেল বেজেই চলছিল।
“না না...খুলিস না...ওরা আমাকেই বোধহয়... শোন শোন তুই বলবি নেই...নেই, বুঝলি তো...”

রাঘব হতবাক হয়ে গেছে মিহিরের কথায়।তার চোখে হাজার প্রশ্ন।


                                                                        আসছে...

No comments

ONGOING BEST WRITINGS

আমি আছি তোমার পাশে -Ami achi tomar pashe -Poem of life

আমি আছি তোমার পাশে Poem of life অন্তরের উষ্কানিতে তুমি আমার আবরণ,  অন্যথায় ব্যাতিক্রমি জীবন মূল্যে আচ্ছাদিত পুরুষসিংহ ...  আমি...