Theme images by caracterdesign. Powered by Blogger.

Me and my poems

দহন (Dahan) #3 the end

 কুটিল মনস্তাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ শুরু হয়েছে তার ভেতর। আকাশে আবার মেঘ গর্জে উঠল..
.....................................................................................................

Story, mystery,  killing


রটি এখন শান্ত, সোফার এক কোনে বসে ব্যাগে টাকাগুলি গুটিয়ে রাখছিল মিহির। সে রাঘবকে দেখতে পায়নি। মিহিরকে একবার দেখে মন্থর গতিতে রান্নাঘরের দিকে চলে যায় রাঘব। সবজি কাটে, চাল ধোয়, স্টোভ ধরায়, খাবার বানায়, দুজনের জন্যই থালায় বাড়ে খাবার। সকাল থেকে আজ কেউই কিছুটি খায়নি, পেটের ক্ষিদেরো কোন  খবর নেই। এদিকে বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, দিনটা আস্তে আস্তে আরও কালো হয়ে আসছে। এযেন অস্থির অবস্থা, ঘরের বাইরে, মনের ভিতর সর্বত্রই। মিহিরকে দেখল সে, সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে, হাত দুটি তার কপালের ওপর, মুষ্টিবদ্ধ। ব্যাগটি তার পায়ের কাছে সোফার উপর। রাঘবের হাত কাঁপছে, রাঘবের মন দূর্নিবার পরিকল্পনা করে চলেছে। ঐশ্বর্যশালী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় দেওয়ার পরিকল্পনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে পাশের ড্রয়ার থেকে এক ফাইল ওষুধ বের করে। এগিয়ে যায় মিহিরের জন্য বেড়ে রাখা খাবারের থালার দিকে। সুগন্ধি খাদ্যে মিশিয়ে দেয় চিরনিদ্রার ওষুধ।
একই ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে, এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি তার। তাই সয়ে যাওয়া সেই শব্দ ঘরের ভিতরের সাময়িক স্তব্ধতাকে বিরক্ত করছেনা আর। মিহিরকে ডাক দিল সে।
“কিরে তৈরি হয়ে গেল, এত তারাতারি”
“এই আর কি...বেসি কিছু খাওয়াতে পারলাম না” রাঘব অনেক শান্ত, চোখ তার হাতের থালার দিকে।এগিয়ে এসে রাখল টেবিলে, একটি থালা এগিয়ে দিল মিহিরের দিকে।
“চলবে চলবে... সকাল থেকে কিছুই হয়নি, এ তো অনেক...”
থালার দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে মিহির উঠে বসল সোফা থেকে। সামনা সামনি বসে একে অপরের। “ বাহ্‌ বেশ রান্না করিস তো তুই... গন্ধ দারুন বেরুচ্ছে...” রাঘব কিছুই বলছেনা দেখে মিহিরই আবার বলল “ কিরে তোর কথা কমে গেল হটাত... খারাপ পেলি!”
মিহিরের কথায় চমকে ওঠে সে, টেনশনে গা তার গুলোচ্ছে, কথা কি বলবে। সামান্য হাসল রাঘব “চল শুরু করা যাক”
সামনে থালা, থালায় খাবার, দুটোতেই একই জিনিস। তবে একটি জীবন সহায়ক অন্যটি নাশক। মিহির ক্ষুদার্ত, সে শুরু করে দিল। রাঘবের পেটেও আগুন জ্বলছে, উন্মত্ততার। তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কেউই কোন কথা বলছে না। সে দেখছে মিহিরকে, সেই যা মাঝে মধ্যে রান্নার কথা বলছে, বলছে শহর ছাড়ার কথা, তার সাহসিপনার কথা। রাঘব দেখছে তাকে শুধু... অপেক্ষা করছে ওষুধের কাজ করার। সে খেয়াল করছে মিহিরের কথা আস্তে আস্তে কমে আসছে, পেঁচিয়ে যাচ্ছে তার কথার সুর, কথার ছন্দ। মিহিরের চোখ জুরিয়ে আসছিল, সে খাওয়া ছেরে রাঘবের দিকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। মিহিরের মাথা ঘুরছে, চোখদুটো কেমন জানি ফেকাশে হয়ে যাচ্ছে...হ্যা হ্যা রাঘব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। রাঘব দেখতে পাচ্ছে অপূর্ব সুন্দর লেদারের কালো ব্যাগটাকেও যার মধ্যেই আছে তার সব স্বপ্ন পুরনের টাকা... হ্যা টাকা..টাকা, অনে...ক টাকা।
মুখ থুবড়ে পরল মিহির হালার উপর। দাড়িয়ে পরে রাঘব, তার শরীরে কুকুরের লোভ আর শিয়ালের ধূর্ততা একসঙ্গে কাজ করছে। সে মুহূর্তে ছুটে যায় ব্যাগটার দিকে। চেন্‌ খুলে হাত বুলোয় সেই টাকাগুলোর ওপর, অজান্তেই একফোঁটা লালা গড়িয়ে পরে তার মুখ থেকে সেই পাতলা কাগজের নোটের ওপর। তার দৃষ্টি অশান্ত, ব্যাগের অন্যান্য চেন্‌’গুলোও তারাতারি খুলতে থাকে সে।কিছু খুজছে সে কিন্তু পাচ্ছে না, তীক্ষ্ণ নজরে রাঘব খুব ব্যাস্ত। “পাচ্ছি না, পাচ্ছি না...কোথায় লুকোলো সেটা...হ্যা হ্যা... জ্যাকেট...পকেটে...” পাশেই রাখা লেদার জ্যাকেটের পকেট তন্য তন্য করে খুজতে থাকল সে। কিন্তু হটাত...
রাঘবের পেছনেই টেবিলে মুখ থুবড়ে পরে থাকা মিহিরের চোখ খুলে গেল। ঝাপসা...ঘরের পরিবেশ, মাদকের মত দুলছে তার হাত, তার শরীর। রাঘবকে দেখতে পেয়েছে সে পেছন থেকে। তার জামার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এল খাঁজকাটা সেই ছুরি’টা। রাঘব পায়নি, সে মিহির কেও দেখতে পায়নি। মিহির এগিয়ে এল ধীর পায়ে, হাতে তার নৃসংশ অস্ত্রটি। জাপটে ধরল রাঘবকে পেছন থেকে, ছুরিটা ঠিক তার গলার টুটিতে।
“কি! মূর্খ ভেবেছিলি আমায়? হ্যা... ধোকা দিবি... টাকা..লাগেনা... খুন করবি আমায়... বোকা পেয়েছিস...সব বুঝি আমি”
রাঘব হতভম্ব, সে কেঁপে উঠেছে, আঁতকে উঠেছে, মাথা নড়াতে পর্যন্ত পারছেনা। তার ছোখ লাল, হাতে নাতে ধরা পড়েছে। মিহির মরেনি, অজ্ঞান হয়ে পরে ছিল। মৃত্যুমিস্রিত খাবার সে বেসি খায়নি, তার চেয়ে ক্ষিদের তারনায় জল খেয়ে খয়েই পেট ভরেছিল। বলতে গেলে জলই তাকে মরতে দেয়নি।
তবে মিহিরের শরীর গুলচ্ছে, সামান্য হলেও তো বিষ কাজ করেছে। তার হাত কাঁপছে, সাথে ছুরিটাও
“মিহির তুই...” রাঘবের গলা কেঁপে উঠেছে, কান্না পাচ্ছে তার।
“না...মরিনি... ধোকেবাজ”
“ছেরেদে..ছেরেদে... প্লিস”
“তোকে?...আমাকে মারবি!দেখ মরিনি...ভেবেছিলি একাই সব হাপিস করবি...তুই...হ্যা এখন তুই মরবি, হ্যা তুই যাবি উপরে...অনেক উপরে...পৃথিবীর ব্যালকনিতে... আর আমি হব... নতুন ‘রাঘব’...।”
শান্তি, একদম শান্তি। বৃষ্টি থামেনি, গর্জনোৎপাতও কমেনি। মিহির সোফার গদি দিয়ে চেপে ধরেছে রাঘবের শিরাকাটা গলা, রাঘব ছটফট করছে। গারো সবুজ গদিটা এক সময়ে কালচে লাল হয়ে গেল আর ফ্যাকাসে হয়ে গেল রাঘবের মুখ।
বলা হয় ধূর্তের ছলের অভাব হয় না, রাঘব নামে নিজেকে বদলে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে মিহির উরে যায় অন্য কথাও। শহরের বাইরে পাওয়া যায় একটি মৃতদেহ, ব্লু জিন্স, লেদার জ্যাকেট আর কালো লেদার ব্যাগ, শূন্যতায় পরিপূর্ণ। টুটি কাটা, মুখ বিকৃত... চেনার উপায় নেই। পুলিশ শনাক্ত করে বলে, তিন চোরের এক চোর, বাকি দুই তাকে মেরে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে, নিয়ে গেছে সব টাকাও।
......................................................................

এই হল সব কথা, সব ঘটনা, একদম সব। প্রথমে যে ঘরবন্দি রাঘবকে জেনেছিলাম, আসলে সে তা নয়, সে মিহির। লক্ষ টাকা চুরি করাদের একজন। আজ তার যত সম্পত্তি সবই সেই চুরি করা টাকা থেকে হয়েছে এককালের বন্ধুকে মেরে নিজে বেঁচে পালানোর জন্য। কিন্তু সেই দিনটার পর শান্তিও তার জীবন থেকে পালিয়ে গেছে। মানসিক ঘাতপরিঘাতে তাকে অশান্ত হতে হয়েছে দিন পরদিন। মনে হত, কেউ আছে যে সবসময় তার দিকে চেয়ে রয়েছে, কাজে ব্যাঘাত করছে, তাকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হয়রান করছে। একাকীত্বে সেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যেত। বাঁচতে সে বিয়েও করে, কিন্তু ভয় সবসময় স্ত্রী যদি সব জেনে ফেলে, পুলিশ যদি টের পায়। তার রূঢ় আশ্চর্য ব্যাবহার ঘরময় এক ক্লেশকর পরিবেশ তৈরি করেছিল। সংসার ভেংগে গেল।
আজ সে আক্রান্ত, সে বুঝতে পারে তার মনের বিভাজন ঘটেছে, এক মন্দ আরেক ভাল। আর এই ভালোর দিকটার শক্তি হটাতই খুব বেড়ে গেছে। সে মন্দকে হারাতে চাইছে। মানসিক বিরক্তিতে ছটফট করছে, অধৈর্য করে তুলেছে। সে বুঝতে পারে, পাগল হয়ে যাচ্ছে সে দিনদিন। সম্পূর্ণ জগত, জীবন যেন শুন্য।
অনেকদিন পর, ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে সে... যার নাম মিহির। স্থির চোখে এগিয়ে যায়...থানার দিকে। এরকম শেষই হয়ত তার প্রাপ্য, তার যোগ্যতম শাস্তি।।
   ‌‌‌‌‌                                                           ------সমাপ্ত------

No comments

ONGOING BEST WRITINGS

আমি আছি তোমার পাশে -Ami achi tomar pashe -Poem of life

আমি আছি তোমার পাশে Poem of life অন্তরের উষ্কানিতে তুমি আমার আবরণ,  অন্যথায় ব্যাতিক্রমি জীবন মূল্যে আচ্ছাদিত পুরুষসিংহ ...  আমি...