কলিঙ্গের যুদ্ধ
বালুর ঝড়েতে উড়িয়ে নেয় সব গুঁড়িয়ে দেয় রণ তেজে..
সামনা যার হয় নিষ্কৃতি তার নয়,
দুরন্ত ছুটন্ত, নাই বাধা নাই হার,
ক্ষমা নাই - নাশ সবার,
ঘোড়ার পিঠে গতিময়।
সম্রাটের এই হল কলিঙ্গের যুদ্ধ,
আছে রক্ত শুধু রক্ত,
যেন মৃত্তিকার রঙ বোঝাই শক্ত,
রক্তিম আভা চারিদিকে,
সীমাহীন হাহাকার - চিৎকার - আর্তনাদ,
কলিঙ্গের আত্মিক অবসাদ।
কি যে সে তাড়না, চলেছেন ছুটে মহান সেই সম্রাট,
ঢোলে পরে আরোও মৃত্যুর গহবরে
তথাপিও থামছেন না কোন বাধায় কোন দুরাশায়..
ঝরে শুধু রক্ত, একের পর এক হত্যা, অনবরত. .
যেন মৌর্য সাম্রাজ্যের উন্মুক্ত তলোয়ার গুলি,
অনিয়মমাফিক পিপাসার্ত,
ছিন্নভিন্ন করে কেড়ে নেয় প্রান,
ঘুমন্ত পৃথিবীকে জাগিয়ে তুলে,
প্রাণহীন শ্মশানের অভিযান।
পশ্চিমের রঙ্গিন আভায় আরও রক্তিম হয়ে উঠল রণক্ষেত্র,
এই সংহারের, এই নৃশংস নাশকতার, বর্বরতা আর অত্যাচারের,
একমাত্র সাক্ষী রইল সেই দিনমণি দিবাকর।
দিন গেল ঢোলে নিশি এলো চলে,
ক্ষান্ত হলো সেই শত্রু বধের খেলা,
ধীরে ঢলে পড়ে, একপক্ষের শব, থেমে যায় যেন আরেক পক্ষের, আরেকজনের কলরব।
স্তব্ধ হল চারিদিক, নিজের ক্লান্তি অনুভূত হলো সম্রাটের,
তবে স্বস্তি কোথায়!
একাএক দূর হতে ছুটে এলো মর্মান্তিক সেই কোলাহল,
হাজার হাজারের সিক্ত নয়ন কেড়ে নিল যুদ্ধজয়ের অভিমান।
কেবল আগুন আর আগুন..
তাও রক্তাভ চিতা, অন্তিম শয্যার।
শোক শোক আর শোক,
রক্ত লাশ আর রক্তে মাখামাখি নিরীহ লোক,
হাহাকার অশান্তি আর স্নায়বিক অগ্নুৎপাত,
বিধবাদের গ্লানি দুঃখ আর অনাথদের অকথ্য অভিশাপ।
ক্লান্তিময় হয়ে উঠেছে সব, আকাশ-মর্ত-পাতাল,
নিশাচরদের ভিড় আর বিনিদ্র সাথীহারার ক্রন্দন,
মিলেমিশে হয়েছে অশান্তি, অশান্ত হয়ে পড়েছে ধরণী,
চক্ষুশূল যেন হয়ে উঠেছে আজ এই রণাঙ্গন,
ঘ্রাণেন্দ্রিয়.. নির্বোধ বালকের মতো ছটফট করছে শরীরময় অপরাধবোধের সিক্ত রক্তের দুর্গন্ধে।
হায়.. কোথা হতে পাই এই হৃদয়বিদারক জ্বালার সমূহ নিষ্কাশন!
হঠাৎ কেউ যেন বলে উঠলো,
কেন হল এমন.. এত নরসংহার এত অবিচার, সব কি মহান হতে?
কোথায়, তা তো হয়নি!
কেহই তো থাকলো না আর!
মহানতার প্রতীক হলাম কোথায়!
শান্তি কোথায়! বিজেতার উল্লাস কোথায়!
এত কিছু অর্জন করেও নিজের কার্যসিদ্ধির সার্থকতা কোথায়!
কি করলাম, কেনই বা করলাম,
সবই যেন হেরে নিঃশেষই হলাম।
আর নয়, এবার চির প্রশান্তির পথে,
সম্রাটের শিরোভূষণ, তলোয়ার, কিছুই রইল না আর সাথে,
আত্মগ্লানিতে শুদ্ধ হয়ে ছাড়লেন তিনি সব,
বৌদ্ধমতে দীক্ষা নিয়ে, শান্ত স্নিগ্ধ হয়ে, করলেন মহাজপ,
বুদ্ধের সেই শান্তির বাণী হয়ে রইল শুধু পাথেয়,
বুদ্ধ বাণী হলো তার জন্যই পৃথিবীময় অজেয়।
আজ যিনি প্রতিজনের নায়ক, সবাই যাকে শ্রদ্ধা করে, শুধুই সম্রাট নন তিনি..
হলেন বৌদ্ধ সম্রাট অশোক।।
Post a Comment