Theme images by caracterdesign. Powered by Blogger.

Me and my poems

সেফটি প্রটোকল - Bengali short story

গল্প: সেফটি প্রটোকল
লেখক: সত্যপ্রিয়


"যাহ! ফোনটা গেল তো হারিয়ে!"

বিস্ফারিত চোখের চাওনি আমাকে আরো ব্যতিব্যাস্ত করে তুললো। বাড়িতে এসে বাজারটা নামিয়ে হঠাৎ মনে হল প্যান্টের ডান পকেটটা হালকা। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমার গিন্নির এই বিস্ফোরণ। তারপর আর কি, দৌড় দৌড়..

গিন্নির আর্জেন্ট নোটিফিকেশন পেয়েই বাজারে গেছিলাম শাক-সবজি কিনব বলে। হরেক রকমের সবজি এটা ওটা কেনার পর যতদূর মনে আছে লাল লাল টমেটোগুলোর উপরে মোবাইলটা রেখে প্যান্টের ব্যাক পকেটে হাত ঢুকিয়েছিলাম মানিব্যাগটার খোঁজে। অনলাইন ট্রানজেকশন সম্পর্কিত সতর্কবাণী শুনতে শুনতে মনে এমন ভয় ঢুকে গেছে, এখন চেষ্টা করি যতখানি সম্ভব কম ব্যবহার করব মোবাইলটা। এমনকি ইউপিআই ট্রানজেকশন করতে পর্যন্ত আজকাল ভয় হয়। কিন্তু হাতে মোবাইল নিয়ে লাট্ সাহেবের মতন ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাসটা কেমন করে ছাড়ি। শাকসবজি কেনার পর মানিব্যাগটা থেকে ক্যাশ দিলাম, খুচরো নিলাম আর তারপর মনে হয় চলেই এলাম। বাড়ি পৌঁছতে ১৫ মিনিট সময় লেগেছিল, ফিরে এসে দেখি এই কান্ড, মোবাইলটা আর পকেটে নেই। গিন্নির চোখে চোখ রাখার সাহস হচ্ছিল না। নিজেকে সর্বজ্ঞানী বলে ভাবা মানুষটা যদি হঠাৎ করে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করে ফেলে, তাকে তার অনুগামিনী গিন্নি কি বলে ভাববে, ভেবেই মন আত্কে  উঠছিল। কথা না বাড়িয়ে চটপট সেই দোকানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হলো। ফেরত গিয়ে দেখি দোকানদার দোকানদারি করেই চলেছে। ইনকয়ারি করে কোন লাভ হলো না, উল্টো একগাদা জ্ঞান রস পান করে পেটব্যথা হয়ে গেল। কত মানুষ আসছে যাচ্ছে, কে কার খবর রাখে। ছোট ছোট টমেটো গুলোর সাথে কেউ কি মোবাইল টাও গিলে খেলো!
এ হল এক অনাকাঙ্ক্ষিত বাজে সমস্যা, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে আজকাল মোবাইলটাও অত্যন্ত জরুরি হয়ে গেছে। এ হারিয়ে যাওয়া মানে শরীরের কোন অঙ্গই চলে গেল বলে মনে হয়। জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কত শত মানুষের সাথের সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গেল মুহূর্তে। আজকাল স্মৃতি কোষে আর জায়গা নেই, স্মৃতিগুলো তো শর্টস আর রিলেদের দখলে।  তার ওপর আবার এ আই, ভাবনা চিন্তা সবই এদের দখলেই চলে যাচ্ছে, আর মগজটা! সামান্য ফোন নাম্বার মনে রাখার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে, সবই তো মোবাইল ফোনে স্টোর হয়ে থাকে। ভাবলেই গা গুলিয়ে উঠছে যে এক নিমিষে নিজের জীবনের কন্ট্রোল হয়ত অন্যের হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন। একটা ছোট্ট হ্যান্ডি ডিভাইস, এই মোবাইলটা, মনে হয় না একটু যেন বেশিই ইম্পর্টেন্স দিয়ে ফেলেছি!
"এখন কি করব!"
উফ! মাথাটা যেন কিছুই ভাবতে পারছে না। দিশেহারা হয়ে গেছি, মনে হয় যেন জীবনের ইতিহাস আর ভবিষ্যৎ হঠাৎ করে ভ্যানিশ হয়ে গেছে আর আমি হয়ে গেছি স্তব্ধ।
বাড়ি চলে এলাম। অবসন্ন মনে ঘরে ঢুকতেই গিন্নি একটি কথা বলল যা শুনে আমার মনে আশার কিরণ নতুন করে দেখা দিল।
"আমার ফোনটা নিয়ে বসে থাকো আধঘন্টা পরে ফোন করবে বললেন।"
"কি ব্যাপার?"
"আরে বুঝতে পারছ না কেউ তোমার ফোনটা থেকে আমায় কল করে বলল ফোনটা উনি পেয়েছেন আর তোমার সাথেই কথা বলতে চান।"
ভরাডুবি হতে হতে কেউ তাকে কিনারার সন্ধান দিল, এ তো চমৎকার, ভাবতে পারা যায় এই পৃথিবীতে এখনো ভদ্রলোক আছে, আর উনি স্বয়ং আমাকেই ফোন করবেন। নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ, ভগবানের ফোনের আশায় প্রতীক্ষারত। ডাইনিং টেবিলের উপর এক বাটি মুড়ি আর পাশে ফোনটি নিয়ে বসে আছি, এমন সময় বেজে উঠলো সুরেলা সুরে "ভব সাগর তারণ কারণ হে.."। রিসিভ করতেই হাই হ্যালোর কোন বালাই নেই, ওপাশ থেকে ভেসে এলো মার্জিত এক পুরুষ কণ্ঠস্বর..
"আপনার ফোন!"
কথার আলাপচারিতা শুনে আমার মনে আশার উদ্রেক হল, বললাম..
"আজ্ঞে হ্যাঁ.. আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার মত মানুষ হয় না.."
"হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো বটেই, তবে একটা জিনিস আপনি কি বুঝতে পারছেন?"
"হ্যাঁ.. কি বলুন তো.. ঠিক বুঝলাম না!"
"হ্যাঁ বোঝাচ্ছি, একটু ধৈর্য ধরুন, আপনার সেটার খুব প্রয়োজন হবে এখন.."
"স্যার আপনি কি বলছেন সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে না!"
"হুম্.. বুঝতে পারবেন, আমি বললেই ঠিক বুঝতে পারবেন.., আমি তো ফোন করছি আপনার মোবাইল দিয়ে আপনার গিন্নির নাম্বারে, সেটা হলো কি করে?"
মাথাটা হঠাৎ যেন বনবন করে উঠলো। ঠিক তো এটা তো ভাবি নি। মোবাইল ফোনে তো পাসকোড থাকে, আমার যেমন প্যাটার্ন লক আছে। এটা উনি জানলেন কি করে। আমার অতি পরিচিত কেউ নাকি রে বাবা! মাঝেমধ্যেই তো এত এত মানুষের ভিড়ে ওভার স্মার্টনেস দেখিয়ে স্মার্টফোনের প্যাটার্ন আনলক্ করি, আশা করি কেউ দেখবে না, কেউ আবার অভদ্রের মতো দেখে ফেলল নেকি! উনার কথায় আমি তো হতবাক, কিছুই বেরোলো না মুখ দিয়ে। তাই উনিই বললেন..
"এত চুপচাপ, মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝেই ফেললেন, এমন করে স্মার্টফোন মাঠে ঘাটে দান দিয়ে আসলে কি হতে পারে বলুন তো?"
ভাষা তো মার্জিতই ছিল কিন্তু হাবভাব খানা সুবিধাজনক বলে মনে হচ্ছিল না। এবার আমি একটু উত্তেজিত হয়েই বলে ফেললাম..
"হ্যাঁ গন্ডগোল তো একটা হয়েছে বটে, তবে কোথায় আসলে মোবাইল ফোনটা পাবো একবার বললে ভাল হতো না!"
সেই মার্জিত সুরে উত্তর এলো..
"তা তো বলা যাবে না মশাই, আর ঠিক সেই কারণেই আপনাকে ফোন করেছি যাতে এদিক-ওদিকের টেনশন আবার আপনাকে নিতে না হয়।"
এমনিতেই তখন থেকে মোবাইল হারানোর টেনশন তার উপর এখন আবার এহেন রেগিং চলছে, মুখটা খিঁচিয়ে উঠলো..
"ওসব বাজে কথা ছাড়ুন, আমার মোবাইলে কিন্তু লোকেশন ট্রাকার আছে। পুলিশের কাছে গেলেই আপনার নারী নক্ষত্র পর্যন্ত টের পেয়ে যাব। তখন বিপদ আপনারই হবে, তাই ভালোই ভালোই মোবাইলটা আমাকে ঘুরিয়ে দিন।"
ওদিকে যেন অট্টহাসি, আমার মুখের কথায় যেন কোন কাজই হলো না,
"বাজে কথা আপনি ছাড়ুন মশাই, মোবাইল তো আপনি পাবেন না, তবে চুরি করা মহাপাপ তাই বলে ডাকতি করতে চলেছি, আপনাকে বলে।"
এই ডিজিটাল ডাকাতগুলোর এত বার বাড়ন্ত দেখে আমার বেশ ভালই রাগ উঠলো, হাতের মুঠো শক্ত করে বলে উঠলাম..
"কিছু যদি ক্ষতি হয় ব্যাটা তোকে আমি পুলিশে দেব, কলার উঠিয়ে চুরি করা ঘুচিয়ে দেবো তোর, তুই আর তোর গেং যদি পচে না মরিস আমার নাম নেই.."
"বেশ ভালো, তাহলে আপনি প্রসেস শুরু করুন, আমিও শুরু করি আপনার মোবাইলের স্মার্টনেস পর্যবেক্ষণ করা। দেখি কোথায় কি সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন, দেখি কে জেতে..।"
বলেই ফোনটা খট্ করে কেটে দিল। আমি হতবাক, কি করি, যা বললাম সেটা করার প্রস্তুতি তো আমার জানা নেই। করবো করবো করে লোকেশন ট্র্যাকারটাও অন করে রাখিনি। আমার জীবনের সমস্ত কিছু তো সেই স্মার্টফোনের মধ্যেই ঢুকে আছে। ফটো ভিডিও মেসেজ তো ছেড়েই দিলাম, একগাদা সোশ্যাল মিডিয়া, তাও ছেড়ে দিলাম। জীবনের হিসাব-নিকাশ টাকা-পয়সা, সমস্ত ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাপারগুলো তো স্মার্টফোনের অ্যাপ গুলোর মধ্যেই ঢুকে আছে। এখন কি করি? আমি তো কোনদিন ভাবিই নি এমনও হতে পারে, স্মার্টফোন ব্যবহার করি বটে তবে আজকে হবো কালকে হবো করতে করতে এখন পর্যন্ত স্মার্ট হয়েই উঠিনি। চোখের সামনে সব যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা ঘুরছে। রাগ আর ভয় একসাথে মিশ্রিত হলে কেমন যে গলাটা শুকিয়ে যায় আমি টের পাচ্ছিলাম। হাতের  ধাক্কায় মুড়ির বাটিটা পড়ে গেল টেবিল থেকে।

হয়তো গিন্নিই এসে তুলেছিল আমাকে, বাড়িতে তো আর কেউ ছিল না।
"দেখো দেখো সব বোধ হয় গেল আমার, সারা জীবনের জমা পয়সা পুঁজি সব বোধ হয় মানুষটা কেড়ে নিল।"
হায় হায় করে কেঁদে উঠলাম আমি। আমার অবস্থা দেখে গিন্নির চোখেও দেখি জল, সে আমায় বলল..
"ওতো সোজা, এটা সত্যি যে স্মার্টফোন ব্যবহার করলেই হয় না, তার নষ্টি ফোস্টি গুলোও জেনে রাখা দরকার।"
"কি আবার তুমি আমাকে জ্ঞান দিতে শুরু করলে.."
"জ্ঞান নয় গো সত্যি কথা, তোমার যখন ওনার সাথে কথোপকথন চলছিল, আমি তোমার ল্যাপটপ খুলে সব তোমার সার্ভিসগুলো ডিএক্টিভেট করছিলাম, তাই আর এখন চিন্তা নেই। এমনকি তোমার ফোন নাম্বারটাও এখন উনি অ্যাক্সেস করতে আর পারবেন না, ওটিপি-টোটিপি তো দূরের কথা।"
এবার আমার হতভম্ব হওয়ার পালা, কি করে জানলো সেসব!
"কি বলছ কি? তুমি পাসওয়ার্ডগুলো কিভাবে জানতে পারলে!"
"কেন তুমি তো একদিন আমাকে দেখিয়েছিলে তোমার সেই ছোট্ট ডায়েরিটা যার মধ্যে সবকিছুই তুমি লিখে রাখো। সময় নষ্ট না করে আমি সেটারই সদ্ব্যবহার করেছি।"
আমি হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারছি না, এই না হল স্মার্ট-গিন্নি। গিন্নি আবার বলল
"উনি যতই স্মার্ট হোন না কেন, স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে আমিও কি কম স্মার্ট হয়েছি! কি জানি বলো তোমরা 'সেফটি প্রটোকল', সেটা জানলেই বাজিমাত।"
"বা: বা: দারুন, তবে একটু দাঁড়াও তো, কি বলছ ওকে.. উনি???
ব্যাটা ডাকাত!"

************

No comments

ONGOING BEST WRITINGS

আমি আছি তোমার পাশে -Ami achi tomar pashe -Poem of life

আমি আছি তোমার পাশে Poem of life অন্তরের উষ্কানিতে তুমি আমার আবরণ,  অন্যথায় ব্যাতিক্রমি জীবন মূল্যে আচ্ছাদিত পুরুষসিংহ ...  আমি...