Theme images by caracterdesign. Powered by Blogger.

Me and my poems

Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-1



অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)

(১)

পাশের জমজমাট চরাদামের শব্জীবাজারটা ছেড়ে রাস্তার ওই মোড়ে বসা সস্তা বাজারের দিকে হন্‌ হন্‌ করে এগিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। পায়ে হাঁটা পথে বাজারটা একটু দুরে হলেও, তার মত অনেক মানুষেরই ভীর হয় সেখানে। সস্তা, বাড়ি গিয়ে পস্তা – এই নিয়ম জীবনভর এদিক ওদিক না তাকিয়ে পালন করা যায় না। অন্তত তার জন্য, যার ঘাট শুন্য মাঠ। অন্তত তারা, যারা হঠাৎ চুনপুটি হয়ে হাজার দায় দায়িত্বের চাপে পরে এক্কেবারে কপর্দকশুন্য। বাধ্য হয়েই সস্তার দিক খুঁজে ফেরে তাদের চোখ। ভদ্রলোকের বর্তমান অবস্থায়ও সেই একই কারুণ্যের প্রকোপ ঘটেছে। তাই তিনিও গত দুবছর যাবত সস্তার পথ ধরতে বাধ্য হয়েছেন। অটো রিক্সার ধার ধারেন না। বাড়ি দুর হলেও, সরকারি ভাঙাচোরা ফুটপাত দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতেই তিনি অভ্যস্ত। তাছাড়া বাজার হাটের শহুরে রাস্তাঘাট তো তেমন কি আর সুরক্ষিত যে যানজটের ধাক্কায় হাত-পা না ভাঙ্গাটা অস্বাভাবিক। তার চেয়ে তাঁর চোখে পায়ে হাঁটা ফুটপাতই অনেক শ্রেয়। চশমাটা নাকের ডগায় ঠিকমত টেকাতে পারলেই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।

Adekha Upakhyan-Storyভদ্রলোকের নাম প্রথম ঘোষাল। তিনি বাড়ির মেজছেলে হয়েও কেন যে তাঁর নাম ‘প্রথম’ হল – তা বহুচেষ্টা করেও জানা যায়নি। কিন্তু তাঁর মত একজন সাংসারিক দায়বদ্ধশীল মানুষের চিরাচরিত পরিচয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হবে এই গল্পের স্রোতে। তবে এ গল্পের সূচনা এই মুহূর্তে তাঁর হাত ধরেই করা যায়। বর্তমানে প্রথমবাবু হাতে একটি কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে, এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চলেছেন বাজারের মাঝে। সাদা – যা সাত্বিকতার পরিচয় বহন করে, তার খুবই প্রিয় রং। তাই সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে প্রায়ই রাস্তায় বেড় হন তিনি। তিনি বলেন, এতে নাকি মন-মগজ দুটোই খুব ভাল থাকে – সাইকোলজিক্যাল এফেক্ট আর কি। যাহোক, ফেলে আসা বাজারটার শব্জী সুদর্শনীয় হলেও এগিয়ে গিয়ে দামটা জানতে বড়ই অস্বস্থি লাগে, জানেন যে কুলোবে না তার মাসিক হিসেবে। কিন্তু হায়... মনে পরে এককালের সেই ব্যাগ ভর্তি করে বাজার করার দৃশ্যটা... সবই তো সেই, সেই দোকান, সেই দোকানদার, তার চেলারা, একই তাদের হাঁকডাক। তখন বাজার করতে যাবার সময় সবাই ডাকত, জানে... কথা কম কাজ বেশি করার মানুষ ইনি, আর কোনোটা কিলো’র কমও নেবেন না। হেসে খেলে সব ব্যাবসায়ীরা তার সাথে ব্যাবসা করত। সবই ঠিক সেই আছে, যা পাল্টে গেছে তা হল সময়। আজ তারা কেউ কাউকেই চেনে না, অপরিচিত অকাল কুষ্মান্ডে পরিণত হয়ে গিয়েছেন ক্ষনেকের তফাতে তিনি।

কথায় বলে... মাছ বাঙ্গালীর প্রিয় প্রথম চাহিদা, আর এই ভদ্রলোকও তার ব্যাতিক্রম নয়। বাজারে এসে যদি মাছবাজারটা অন্তত একবার দর্শন করতে না পারেন, তাঁর নিজেকে অপূর্ণ বলেই মনে হয়। মনে হয় যেন তাঁর বাঙ্গালী হয়ে জন্মানই বৃথা। এই মাছবাজারে, ঐ মাথায় মদনের দোকানে প্রায়ই বড় রুই ওঠে। আর বলতে কি, সেদিন মাছবাজারটা মনেহয় পুরোপুরি ওখানেই। ভীর ঠেলে গোটা শরীরটা না ঢুকলেও, চশমাটা নাকের উপর শক্ত করে ধরে গলাটা ঢুকিয়ে দিলেই দেখা যায় – বেশ তাজা মাছ এসেছে আজ। তাইতো ক্রেতাদের ভীর উপচে পরেছে মদনেরই দোকানে। তার আরও দু-দুটো হেল্পার আছে – একজন কাস্টমার হাঁকে, মাছ দেখায়, ওজন করে আর একজন কেটে দেয় ঝটপট। মদন শুধু ক্যাশ সামলায়। ও জানে, ব্যাবসায়ীদের সেটাই আসল, হিসেবটা নয় থেকে ছয় হলেই ব্যাবসা লাটে উঠে যাবে। তাই টাকার ব্যাপারটা সে নিজেই সামলায়, বেশ পুরনো খেলোয়াড় বলতে গেলে। প্রায় ছোটর থেকে তাকে দেখেছেন প্রথম ঘোষাল। প্রথম দিকে তার বাবার সাথে বসত, সোজাসুজি কথা বলত আর হিসেবের ব্যাপারে এক্কেবারে একশ শতাংশ ভেজিটেরিয়ান। বাবা মারা যাবার পর, ব্যাবসাটা ওই তো সামলে নেয়, নইলে অনেকেই এদিক ওদিক থেকে এসে যেভাবে জেঁকে বসেছিল তার ব্যাবসাটা গোটানোর জন্য! কতই বা বয়েস হবে তখন তার, এই পনেরো কি ষোল। ...সেই এত ঘটনার সাক্ষী এই ভদ্রলোক, তার পরিচিত। কিন্তু স্বভাব মতই, কাজের সময় কাজী আর কাজ ফুঁড়লে পাজি। একটাও টাইম পাস আলাপি কথা না বলাটা মদনের বিশেষ স্বভাব। ক্রেতাদের তো অনেকেরই অনেক চাহিদা। কেউ বলছে দেড় কিলো মাছটার মুড়োটা বাদ দিয়ে বেশ ভালো কটা পিস করতে হবে বড় বড়, কেউ আবার কানকো'টা উঠিয়ে দেখে প্রসন্ন মনে বলে ওঠে ‘হু, বেশ তাজা... দেখত কত হবে!’ কেউ জানতে চায় মুড়োর দাম, কেউ গুনছে লেজা’র পিস। বেশ ভালই লাগে প্রথম বাবুর। বেশ অনেকদিন আগে বাড়িতে তাঁর গৃহিণীর রান্না করা রুইমাছের মুড়িঘণ্টো’র গন্ধ জেগে ওঠে নাকের শীরায়, স্বাদের আহ্লাদ ফুটে ওঠে তাঁর জীভে। আহা, ‘অনেকদিন হয়ে গেছে বাড়িতে ভালো মাছ হয়নি... নিয়ে গেলে কেমন হয়!’ সেই ভীরের মধ্যে দাড়িয়েই কল্পনায় বিভোর হলেন যে মাছ নিয়ে গেলেই কি কি করবেন তাঁর গিন্নী। মেয়েদের সাথে কি আনন্দ করেই না খেতে বসবেন সবাই। সুগন্ধি মাছের ঝোল বেড়ে দেওয়া হবে তাঁর সামনে, অমৃতের আমেজে ভরা সেই ঝোল পাতে ঢালবার জন্য তুলে ধরবেন তিনি...
“ও মশাই, মাছ নেবেন তো নিন না, ভীর বাড়াচ্ছেন কেন অযথা অমন দাড়িয়ে থেকে!”
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দিয়ে দাড়িয়ে থেকে স্বপ্নের সুবর্ণ সিঁড়ি ভেঙ্গে যাওয়া দেখতেই কড়ায় গণ্ডায়ের হিসেব বুঝে ফেললেন তিনি।
‘ধ্যুৎ!! এক গ্রাসও মুখে দিতে দিল না বেটারা... বড়ই অসভ্য জীব এই মানুষ। স্বপ্ন বড় প্রাইভেট বস্তু, তা সত্ত্বেও তাতে তার ল্যাং না কাটলে চলে না!’ ভীরের ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেয়ে একটু অস্বস্থি অবশ্যই অনুভব করেছিলেন ভদ্রলোক। মনে পরে তাঁর আশেপাশের সেলফিস জগতটার কথা আর সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারের কথাও। দিন দিন যে কি পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেই পরিবার, ভেবেই আৎকে ওঠে ভেতর। তিন তিনটে জ্বল জ্যান্ত মেয়ে যেখানে উপযুক্ত অথচ কোন ব্যাবস্থাই হচ্ছে না কারো, যাঁর কাঁধের উপর তাঁর সংসারের একমাত্র পুরো দায়িত্ব, অথচ উপার্জন নেই, আর্থিক সম্বল বলতে কিছু ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার ইন্টারেস্ট মাত্র, তাঁর এত আয়েসি স্বপ্ন দেখা মানায় না। ...মনে পরতেই পাঞ্জাবীর পকেট থেকে হাতখানা বেড়িয়ে আসে একাএক। চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। মদন তাকে চেনে, তাঁর রোজকার অভ্যেস হয়ত জানে, তাই অমন গোবেচারা মুখ দেখে মিচকি মিচকি হাসে।
“কি দেব আপনাকে... মাছের মাথা?”
‘না থাক, আজ নয়...’
অজান্তেই উত্তর বেড়িয়ে যায় তাঁর মুখ থেকে, বলতে গেলে স্তিমিত কয়েকটা শব্দ আর কি। কতটা কে শুনতে পেল কে জানে। কিন্তু এরপরেই যেন মনে হল, মাছবাজারের সারাটা ভীর তাকে ঠেলতে ঠেলতে একদম বাইরে ছুরে ফেলে দিল। যেন ভদ্রলোক এ পৃথিবীর কোনও অংশই নন। একেবারে অবাস্তবিক কোনও পরিতক্ত মাত্র।

Adekha Upakhyan bengali Story

বাজারভর্তি মানুষ, সবাই কেনাকাটা করতেই চরম ব্যাস্ত। কেউ কোথাউ পাঁচ মিনিটের বেশি দাড়াচ্ছে না। বেশির ভাগেরই ব্যাস্ততার কারন তাদের চাকরির ঘণ্টা। কিন্তু প্রথম বাবুর জন্য তো সেই ঘণ্টা অনেকদিন আগেই বাজা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁর বয়স হয়েছে, তাঁর চাকরীর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু তাঁর প্রয়োজন মেটেনি। এই ভবসাগরে এই বয়সেও তাঁর অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তাঁর তিন মেয়ে আছে, তাকে তাদের বিয়ে দিতে হবে – তাঁর জন্য এ সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। ছেলেটার মত মেয়েরাও পড়াশুনায় ভাল হলে, চাকরী-বাকরি কিছু একটা করতে পারত। ‘কালো, কুৎসিত, রূপ নেই-গুণ নেই, কতগুলো অপদার্থ এসে জুটেছে এ কপালে...’ আক্রোশে ভরে ওঠে প্রথম বাবুর মন। মেয়েদের ওপর ভরসা করে কোনও লাভ নেই, যেখানে তাঁর গুণী ছেলেটির এমন হাল হল সেই হিসেবে নির্গুণীদের তো কোনও স্থানই হয়না। মেয়েরা তাই প্রথম ঘোষালের কাছে খরচের খাতার হিসেব মাত্র। ...মাছবাজারের দুয়ারে হীন বলে মনে হয় নিজেকে। তাঁর ভদ্রতার সাদা পোশাকে হাত-পা বাঁধা এই মানুষটি নির্বোধের মত হাতের ব্যাগটি বগল চাপা দিয়ে এদিক ওদিক দেখে আরেক জন-অরন্যের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর বাড়ির অবস্থাও অনেকটা আজকাল এরকমই – জনবহুল অথচ আয়হীনা হয়ে পরে রয়েছে পৃথিবীর মুখের ছিবড়ার মত। মাত্র দুবছর আগেও তাদের পরিবার চলার মত চলে যেত। ছেলেটিও ছিল, আশার কিরণও ছিল কিছু। এখন তো সেও নেই, আর তাঁর সেই তথাকথিত অন্ধের জষ্ঠি চাকরীটিও নেই। যা থেকে গেছে তা হল... এক মানসিক ভারস্ম্যহীনা স্ত্রী, তিনটি বিবাহযোগ্যা মেয়ে আর একহাড়ি পূর্ণ দুর্ভাগ্য।

চলবে...

No comments

ONGOING BEST WRITINGS

আমি আছি তোমার পাশে -Ami achi tomar pashe -Poem of life

আমি আছি তোমার পাশে Poem of life অন্তরের উষ্কানিতে তুমি আমার আবরণ,  অন্যথায় ব্যাতিক্রমি জীবন মূল্যে আচ্ছাদিত পুরুষসিংহ ...  আমি...