Adekha Upakhyan - অদেখা উপাখ্যান - Story Chapter-3 End
অদেখা উপাখ্যান
(Adekha Upakhyan-Story)
(৩)
ইতিহাসের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে সবাইকেই হয়, নাহলে মানুষ চলবে কি ভাবে।
তবে নিকৃষ্ট স্মৃতি বড়ই নিষ্ঠুর, পিছুটান ছারতেই চায়না। প্রথম ঘোষাল এখনও বাজারে।
বাজারের থলেটা এখনও তার বগল চাপা। পকেটে যে টাকা নিয়ে
বেড়িয়েছেন তাঁর হিসেবে, এ বাজারের দাম অনুপাতে, তিনদিনের বাজার হয়ে যাবে। তাই এমন দিনে মাছ নিয়ে অর্থব্যায় করাটা তাঁর মানায় না। অনেক পুরনো চাবি দেওয়া হাতঘড়িটা দেখে বুঝতে পারেন বেশ দেরি হয়ে গেছে আজ। রাস্তায় বেড় হয়ে তাঁর কি যে হল, পুরনো স্মৃতি বারবার রাস্তা রুখে দাঁড়াচ্ছে। বাজার করার ইচ্ছেটাই বরং তাঁর নষ্ট হয়ে গেছে। এই দূর্লঘ্ন স্মৃতিগুলোকে ডুবোতে চাইলেও বারবার ভেসে ওঠে অকৃতঘ্নের মত, যেন অবিনশ্বর এরা। এসব স্মৃতি আজকাল এ বৃদ্ধের চক্ষুশূল। কিন্তু এড়িয়ে যেতে চাইলেও যেন পারেন না এড়াতে। তখনই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিকে। বারবার দীর্ঘশ্বাস বেড় হয়ে আসে অযাচিত শব্দে।
ঘড়িটার দিকে তাকাতেই মনে হয় বাজার করার কথা। পছন্দ অপছন্দের কোন বালাই নেই, এবার আর কোন পরিচিতের দোকান নয়। নতুনদের সাথে নতুনভাবে দর কষাকষি করে ব্যাগটার অংশবিশেষ ভর্তি করে ফেললেন শেষমেশ। পকেট ফেরত টাকাটা রেখে ব্যাগটা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে চলে এলেন সেই বিভীষিকাময় খাদ্যরাজ্য থেকে। এতটুকু বাজার আজ বড় ভারী বোধ হয় তাঁর। তবুও তো দু-তিন দিনে সবটা শেষ করে ফেলবে বাড়ির বড় বড় মুখগুলো। একাএক দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে তাঁর। মাথার উপর তিন তিনটে বিয়ের দায়িত্ব বহন করা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার যখন চাকরিও শেষ হয়ে যায়, বোধহয় নিজেকে সাবলীল করে রাখাটা কঠিন হয়ে পরে। কালোই জগতের আলো – একসময় আদর করে বলা হত তাঁর তিন মেয়েকে। আজ মনেহয় যেন অভিশাপ। বারবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ‘ভগবান কেনই বা বড়লোকদের ঘরেই আলোকোজ্জল জ্যোতিষ্কের জন্ম দেন আর গরীবের ঘরে কালো! গরীবের জ্বালাকে কি আরো একটু উষ্কিয়ে দেবার জন্য!’
বেড়িয়েছেন তাঁর হিসেবে, এ বাজারের দাম অনুপাতে, তিনদিনের বাজার হয়ে যাবে। তাই এমন দিনে মাছ নিয়ে অর্থব্যায় করাটা তাঁর মানায় না। অনেক পুরনো চাবি দেওয়া হাতঘড়িটা দেখে বুঝতে পারেন বেশ দেরি হয়ে গেছে আজ। রাস্তায় বেড় হয়ে তাঁর কি যে হল, পুরনো স্মৃতি বারবার রাস্তা রুখে দাঁড়াচ্ছে। বাজার করার ইচ্ছেটাই বরং তাঁর নষ্ট হয়ে গেছে। এই দূর্লঘ্ন স্মৃতিগুলোকে ডুবোতে চাইলেও বারবার ভেসে ওঠে অকৃতঘ্নের মত, যেন অবিনশ্বর এরা। এসব স্মৃতি আজকাল এ বৃদ্ধের চক্ষুশূল। কিন্তু এড়িয়ে যেতে চাইলেও যেন পারেন না এড়াতে। তখনই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিকে। বারবার দীর্ঘশ্বাস বেড় হয়ে আসে অযাচিত শব্দে।
ঘড়িটার দিকে তাকাতেই মনে হয় বাজার করার কথা। পছন্দ অপছন্দের কোন বালাই নেই, এবার আর কোন পরিচিতের দোকান নয়। নতুনদের সাথে নতুনভাবে দর কষাকষি করে ব্যাগটার অংশবিশেষ ভর্তি করে ফেললেন শেষমেশ। পকেট ফেরত টাকাটা রেখে ব্যাগটা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে চলে এলেন সেই বিভীষিকাময় খাদ্যরাজ্য থেকে। এতটুকু বাজার আজ বড় ভারী বোধ হয় তাঁর। তবুও তো দু-তিন দিনে সবটা শেষ করে ফেলবে বাড়ির বড় বড় মুখগুলো। একাএক দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে তাঁর। মাথার উপর তিন তিনটে বিয়ের দায়িত্ব বহন করা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার যখন চাকরিও শেষ হয়ে যায়, বোধহয় নিজেকে সাবলীল করে রাখাটা কঠিন হয়ে পরে। কালোই জগতের আলো – একসময় আদর করে বলা হত তাঁর তিন মেয়েকে। আজ মনেহয় যেন অভিশাপ। বারবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ‘ভগবান কেনই বা বড়লোকদের ঘরেই আলোকোজ্জল জ্যোতিষ্কের জন্ম দেন আর গরীবের ঘরে কালো! গরীবের জ্বালাকে কি আরো একটু উষ্কিয়ে দেবার জন্য!’
‘চাকরি চলে গেছে, ছেলে নিঃশেষ হল, টাকা পয়সার অভাবে মেয়েদের বিয়ের কথা চলছে
না, রাতের ঘুম উড়ে গেছে বহুদিন যাবৎ - আর কি কি ছিনিয়ে নিতে চায় সেই ঈশ্বর নামের
প্রস্তর!’ হাজার হাজার ঝটিকা বয়ে হাটতে থাকলেন প্রথম ঘোষাল। সত্যিই প্রকৃতি বড়
বিরূপ তাঁর প্রতি। যাকে তিনি ভরসা করতে চেয়েছেন তারাই তাকে ঠকিয়েছে... সেই ভাইদের
থেকে ছেলে পর্যন্ত, সব। ভগবান কি সত্যিই এত নিষ্ঠুর!
বাড়ির দরজায় এসে কড়াঘাত করতেই দরজা খুলে দিল ছোট মেয়ে। বাবার হাত থেকে
ব্যাগটি নিয়েই জড়িয়ে ধরল তাঁকে। এই তাঁর ছোট মেয়েটি বড়ই আদুরে। তাকে কাছে পেলেই সব
রাগ, সব দীর্ঘশ্বাস মুহুর্তেই উড়ে যায়। বলতে ঘরটাকে অদ্ভুত জাদুমন্ত্রবলে
জীবিত করে রাখে সে, সবসময়। ছোট বাড়ির দরজা খুললেই এঘর সেঘর। রান্নাঘরটি পর্দার আড়ালে একদম
শেষে। ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে একবার ভাল করে দেখলেন তিনি। এ তো সেই,
তাদেরই তো একজন, যাদের নিয়ে তাঁর বর্তমান, তাঁর ভবিষ্যত। সারা রাস্তায় কি সব
কল্পনা করছিলেন তিনি, অবাস্তবিক। ছোট মেয়েটির হাসিতেই তো সুখের সারা সম্পদ
লুকায়িত। এই তিন মেয়ে তো তাঁর মায়েরই প্রতিরূপ। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন তাঁর আদরের
মেয়েকে। এই মেয়েই প্রথম বাবুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে।
‘...এত বাজার কে আনল!!!’
আশ্চর্য, হতবাক বাবার গম্ভীর প্রশ্ন নিনাদ হয়ে বেজে উঠল বাড়ির ভিতর। বড়
মেয়ে, মেজ, সবাই দৌড়ে এল। এত বাজার যে কে আনল, তার উত্তর দিল না কেউই। যা বলল তা
শুনে প্রথম ঘোষালের চক্ষুস্থির। হাসির ছন্দেই তাঁর সেই ছোট্ট মেয়ে তাকে জড়িয়ে বলল “বাবা,
আজ দুটো চিঠি এসেছে... একটা বড়দির এপয়ন্টমেন্ট আর...”

অদৃষ্ট, এই অদেখা যদি সবাইকে এভাবেই শান্তির সমাপ্তি দিতেন কতই না সুখি হত এ পৃথিবী। শতাধিক কষ্টের পর এইটুকু শান্তি সবারই তো প্রাপ্য। কিন্তু সবাই কি পায়! সবাই কি চমকে ওঠে ঠিক প্রথম ঘোষালের মত, ঠিক যেমন করে চমকে দিয়েছে তাঁর জাজ্জল্যমান মেয়েটি। একদম অদেখা স্বপ্নের মত, অদৃষ্টের কৃপায়।।
***সমাপ্ত***
Post a Comment